জলঙ্গির মাথায় গােল একখানা চাদ আলাের ফুটবল হয়ে ভেসে আছে। বৈশাখ শেষে নদীতে তেমন জল নেই। আর গরম খুব। হালকা হালকা হাওয়া দিচ্ছে, সেই হাওয়ায় অবশ্য জলঙ্গির জল নড়ে কি নড়ে না। কিন্তু চাঁদ ভেঙে যায়, দূরে ভেসে হারিয়ে যায় না।
রাজশেখর নদীর ধারায় ভাসতে ভাসতে তার দু'পাশে সাঁতরাতে থাকা দুই গজরাজকে দেখতে পেলেন। চাঁদের গম্ভীর আলােয় তাদের পিঠের খানিকটা, মাথার ওপর দিক, বড়সড় পিছনের কিছু অংশ কোনাে চলন্ত পাহাড় হয়ে জেগে। রাজশেখর সান্যাল আপন খেয়ালে সাঁতরাতে সাঁতরাতে একবার আকাশ, প্রায় স্তব্ধ নদী, আর দু’পাশে জল কাটা জোড়া হাতি—সবই দেখে নিলেন এক সঙ্গে।
ষাট পেরনর পর শরীরের নানান জোড় একটু একটু করে আলগা হয়ে গিয়েছে। তার ওপর ইচ্ছে মরে যাওয়া, সেও তাে এক মহাভার বিশেষ। কিছুই ভালাে লাগে না আমার। বরং চুপ করে বসে থেকে নানা রকম গন্ধ, যেমন ছেলেবেলায় পেতাম রজশাহিতে বাড়ির হাতার ভেতর ফুটে থাকা নাগকেশর, হাসুহানা, কামিনীর তীব্র সুবাস, বাড়ির দুর্গা পুজোয় অষ্টমি আর নবমির সন্ধিক্ষণে জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়ার পর সেই ছাল ছাড়ান মাংস আর রক্তের ঝিমঝিমে আঁশটে গন্ধ, কিংবা কাশীতে তীর্থ করতে গিয়ে সেখানকার আস্ত পাকা পেয়ারা থেকে বার করে আনা গাছের চারা যখন একটু একটু করে বড় হল, তারপর ফল ধরল তাতে, সেই ফলের পেকে ওঠা সুঘ্রাণের স্মৃতি কেমন যেন বিদ্যুৎ রেখা হয়ে চমকে চমকে ওঠে মাথার ভেতর। নাড়িয়ে দিয়ে যেতে থাকে সমস্ত স্মৃতি।
বইটি পড়তে বা ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন...
No comments:
Post a Comment