Pages

Showing posts with label সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়. Show all posts
Showing posts with label সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়. Show all posts

Sunday, November 10, 2024

পূর্ব-পশ্চিম - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

দেশবিভাগ নিয়ে তেমন স্মরণীয় উপন্যাস বাংলাভাযায় লেখা হয়নি। দু-পার বাংলায় ছড়ানাে সমান্তরাল বাঙালিজীবন নিয়েও না। সেই অপূর্ণতাকেই দূর করল এই বিশিষ্ট, ব্যতিক্রমী ও বড়-মাপের উপন্যাস।


দুই বাংলার দুই পরিবারকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাসে বিশেষ কোনও চরিত্রকে মূল চরিত্র বলা যাবে না। একই সঙ্গে অনেকগুলি প্রধান চরিত্র। এইসব চরিত্রের কেউ-কেউ আবার পূর্ব বা পশ্চিম বাংলার গণ্ডিতেই আবর্তিত নয়, আমেরিকাতেও গেছে। ফলে, কলকাতার কফি হাউসের পাশাপাশি কখনও আবার আমেরিকার চোখ-ধাঁধানাে শহরের কথা এই উপন্যাসে। পূর্ব-পশ্চিমএই নামকরণেও যেন নিহিত ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা। এ-উপন্যাসে শুধুই পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার কথা নয়। পূর্ব গােলার্ধ ও পশ্চিম গােলার্ধের বৃহত্তর পটভূমিও এর অন্তর্গত। আবার মানুষের জীবন ও মনে যে পূর্ব ও পশ্চিম, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উত্থান-পতন, সূচনা ও দিনাবসানতাও যেন সূক্ষ্মভাবে প্রতিফলিত এই নামকরণে। 'সেই সময়'-এর লেখকের কলমে এই সময় নিয়ে লেখা 'পূর্ব-পশ্চিম' বাঙালি জীবনের আধুনিক গদ্য মহাকাব্য।

Saturday, November 9, 2024

প্রথম আলো - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে যে-কোনও সমাজের মাঝেমাঝে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিকে পিছু ফিরে দেখা দরকার। আমাদের দেশের অনতি-অতীতের পুনর্দর্শন ও পুনর্বিচার নিয়েই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ণাঢ্য, বেগবান উপন্যাস ‘প্রথম আলো’।


উপন্যাসটিতে আছেন রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসু, ভগিনী নিবেদিতা, অবনীন্দ্রনাথ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অর্ধেন্দু মুস্তাফীর মত খ্যাতনামা সব ঐতিহাসিক চরিত্র।


তা সত্ত্বেও ‘প্রথম আলো’র মূল নায়ক- সময়। আঠারোশো তিরাশি থেকে উনিশশো সাত পর্যন্ত যে-সময়কাল বিস্তৃত। যখন হঠাৎ যেন ঘুম ভেঙে নবজাগরিত কিছু মানুষ আবিষ্কার করছে দেশ নামের এক ভাবসত্তাকে, অনুভব করছে পরাধীনতার গ্লানি। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম আন্দোলন, মহেন্দ্রলাল সরকারদের বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারা, পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ ও প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের ভূমিকা, রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের নানা রূপান্তর, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে নবীনদের মতবিরোধ, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সূচনা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা সৃষ্টি ইত্যাদি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ অনুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে।


মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি ও বিশালতা নিয়ে এই উপন্যাসে কাহিনি পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায়, তারপর সমগ্র ভারতে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ‘প্রথম আলো’ পাঠকচিত্ত জয় করেছে কবেই, কালজয়ের সামর্থ্যেও সে বলীয়ান।




Friday, November 8, 2024

সেই সময় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এই সেই সময় যখন কলকাতার বাবুসমাজ সুরা, নারী ও বুলবুলি-বিলাসে মগ্ন, যখন নব্যশিক্ষিত যুবকেরা প্রাণপণে ইংরেজ-অনুকরণে মত্ত, গ্রাম নিঃস্ব করে প্রজাশোষণের অর্থে চলেছে সংস্কৃতি চর্চা, সমাজ ও ধর্মসংস্কার, তরুণ বিদ্যাসাগর রাত্রি জেগে রেড়ির তেলের আলোয় রচনা করছেন বাংলা গদ্যভাষা, জেগে উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, এই সেই সময়...


হ্যাঁ, একটি বিশেষ সময়ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সুকীর্তিত উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র। তিনি নিজেও এ-উপন্যাস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন: "আমার কাহিনীর পটভূমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দ। এবং এই কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়।" লিখেছেন, "সময়কে রক্ত-মাংসে জীবিত করতে হলে অন্তত একটি প্রতীক চরিত্র গ্রহণ করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক। তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার বৈপরীত্য, শেষ দিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে মার্তৃরূপ দর্শন এবং অদ্ভুত ধরনের মৃত্যু, সবই যে সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা, আশা করি তা আর বিশদভাবে এখানে বলার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় কথা শুধু এই যে, নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল-মৃত অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল আছে। অন্য কোনো প্রসিদ্ধ পুরুষের নাম বা জীবনকাহিনী আমি বদল করিনি...."।


সত্যিই তাই। নাটকের শুরুতে যেমন দেওয়া থাকে পাত্রপাত্রীর নাম ও পরিচয়, তেমনভাবে এই বিপুল বর্ণাঢ্য উপন্যাসের গোড়াতেই যদি দেওয়া থাকত নবীনকুমারের সমকালীন চরিত্রাবলির নাম, বস্তুতই বিস্ময়কর মনে হত সেই তালিকা। মাইকেল, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, হেয়ার সাহেব, দেবেন ঠাকুর—কে নেই! সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দীই যেন নানান চরিত্র হয়ে চোখের সামনে জীবন্ত।


যেটুকু তফাৎ তা হল, গবেষকের রচনায় প্রাণ থাকে না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেই প্রাণটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।


এক দুরন্ত সময়ের জীবন্ত চলচ্চিত্র 'সেই সময়'। বঙ্কিম ও আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত এই গ্রন্থের দুটি খণ্ডকে এক মলাটের মধ্যে এনে সম্পূর্ণ নতুন আকারে প্রকাশিত হল এই রাজসংস্করণ। এ-গ্রন্থের বিপুল সমাদর ও স্থায়ী কীর্তিমূল্যের কথা ম্ননে রেখে এ এক আনন্দ-শ্রদ্ধাঞ্জলি।