Pages

Monday, November 28, 2022

বিদ্যাসাগর - গোলাম মুরশিদ

বিদ্যাসাগর - গোলাম মুরশিদ

না,ঠিক জীবনী নয়। ১৯৭০ সালে ঈশ্বরচন্দ্রের জন্ম সার্ধশত বার্ষিকী পালিত হয়। এবং সেই সালেই এগ্রন্থ বিদ্যাসাগর স্মারকগ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটির সম্পাদনা করেন গোলাম মুরশিদ।

আহমদ শরীফ,বদরুদ্দিন উমর,আবু হেনা মুস্তফা কামাল, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী,মযহারুল ইসলামসহ অনেকেই এবইতে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে, যদি আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলি তবে বলা যায় বিদ্যাসাগরের জীবন, সাহিত্যকর্মের বিশেষ বিশ্লেষণ আর ব্যক্তি বিদ্যাসাগরের সমাজচিন্তাকে মোটাদাগে পাঠকের সামনে আনার চেষ্টা করেছেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে শর্মা (আলোচকরা লিখেছেন পদবী বন্দ্যোপাধ্যায় আর মাইকেল মধুসূদনের কাছে লেখা চিঠিতে নাম স্বাক্ষর করেন শর্মা পদবী হিসেবে) মাত্র ১৮ বছর বয়সে হিন্দু কলেজ থেকে বিদ্যাসাগর উপাধি পান, যেই উপাধিতেই তিনি সমাধিক খ্যাত ছিলেন।

বিদ্যাসাগর লোকটা আসলে কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং বিদ্যাসাগর ই দিয়েছেন এভাবে - " আমি নিতান্ত দেশাচারের দাস নহি।"

কেন বিদ্যাসাগর দেশাচারের দাস নন সেই প্রশ্নের উত্তর তাঁর সমাজচিন্তা ঘাঁটলেই মেলে। আজীবন তিনি অন্যায়, ধর্মীয় হুজুগের বিরুদ্ধবাদ করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড়কাজ বলতে তিনি নিজেই উল্লেখ করেছিলেন বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের স্বীকৃতি লাভকে(এই কাজের জন্য জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকও বিদ্যাসাগরকে বড় মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন ছফা ও সরদার ফজলুল করিমের সাথে আলাপচারিতায়)।

উনিশ শতককে একাই অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর তাঁর এই কাজের মাধ্যমে। বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করতে গিয়ে তিনি যে পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন, ধর্মান্ধদের কর্তৃক যে পরিমাণ বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তার কিয়দাংশ নিয়েও প্রাবন্ধিকরা আলোচনা করতে পারেন নি, তবে সে পরিস্থিতিকে প্রাবন্ধিকরা অল্পশব্দে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন।

অবিভক্ত বাংলার শিক্ষাবিস্তারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনীস্বীকার্য। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে হলেও অনেকক্ষেত্র তিনি শিক্ষাবিস্তারে কাজ করেছেন।

বাংলা গদ্যকে সুসমৃদ্ধ করার প্রয়াস বিদ্যাসাগর শুরু না করলে হয়তো আমরা আরো পিছিয়ে পড়তাম। কিন্তু কেন? উত্তর "শকুন্তলা, বেতালপঞ্চবিংশতি, সীতার বনবাস" প্রভৃতি গ্রন্থে তিনি তাঁর সাহিত্যিক উৎকর্ষতার পরিচয় বেশ ভালো ভাবেই দিয়েছেন। এ বইতে তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণী কিছু প্রবন্ধ রয়েছে।

মাইকেল মধুসূদনের আশেপাশের দুধের মাছিরা কেটে পড়ার পর বিদ্যাসাগর অনেকটা তাঁর ক্রাণকর্তার ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছিলেন স্রেফ মানবতার টানে। মধুসূদনের মতো আরো কতশত মানুষ বিদ্যাসাগরের থেকে সুবিধা পেয়েছিলেন তা পুরোটাই অজানা। মধুসূদন তাদের প্রতীক মাত্র।

মানবপ্রেমে উদ্ভাসিত বিদ্যাসাগর আমরণ তাঁর ভারতবর্ষের দুঃখী মানুষদের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করেছেন অনেকটা নিঃসঙ্গ শেরপার মতো।

সেই মানুষটাই শেষ জীবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রচলিত সভ্যসমাজের বাইরে, সাঁওতালদের মাঝে।জীবনের সায়াহ্নে তাঁর অনেকটা মোহমুক্তি ঘটেছিল চারপাশের মানুষদের প্রতারণা, কপটতা আর সমাজবিধির নোংরা রূপ দেখে।

ঈশ্বরচন্দ্রের মতো মানুষরা পৃথিবীর ইতিহাসে খুববেশি আসেন নাই। যখন এসেছেন তখন পুরো সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের ছাপ রেখে গিয়েছেন।

সারা বইতে বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকর্মকে প্রাধান্য দিলেও ব্যক্তি বিদ্যাসাগরকে চেনার,জানার এবং বোঝার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বইটি পড়তে বা ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন...

No comments:

Post a Comment