খুনে ডাকাত বহেরু একখানা গাঁ তৈরি করেছিল। নিজেই তার নাম রেখেছিল বহেরু গাঁ। সেখানে মানুষের চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে সে। যত কিম্ভূত মানুষ ধরে এনে আশ্রয় দিত সেই বহেরু গাঁয়ে। সংসারে বনিবনার অভাবে একদা এই গাঁয়ে চলে এলেন ব্রজগোপাল। এ-সংসারে কিছু চাওয়ার নেই তাঁর। ডায়েরির সাদা পাতায় তবু তিনি লিখে রেখেছিলেন--ভগবান, উহারা যেন সুখে থাকে। নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ ও দিশাহীনতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্রজগোপাল কি এক অসংশয়িত উত্তরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন? সংসার-উদাসী বাবার খোঁজে বহেরুতে এসেছিল সোমেন। বাবার রোজনামচায় লেখা ওই পঙক্তি-রহস্য বুকে নিয়ে সে কলকাতায় ফিরে গেল। বহেরু গাঁ থেকে ফিরে তাকে যেতে হলই, কেননা প্রত্যেক মানুষেরই একটা ফেরার জায়গা চাই। যদিও সেই কলকাতায়, যেখানে অন্যরকম জীবন, হাজার রকম মানুষ। গ্রাম ও কলকাতা--এই দুই বৃত্তের টানাপোড়েন এবং সংলগ্নতায় সৃষ্ট এই কাহিনী নিষ্ঠুর সময়ের অভিঘাতে পীড়িত ব্যক্তিসত্তার সম্পূর্ণ অ্যালবাম। এর বর্ণাট্য বিস্তারে, ঘাত-প্রতিঘাতে, বিরহ-মিলনে অসংখ্য ছবির মধ্যে জগৎ ও জীবন উৎকীর্ণ হয়ে আছে। এক মহৎ উপন্যাসের নাম ‘যাও পাখি’।
Pages
- হোম
- অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
- অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় II ATIN BANDOPADHYAY
- অদ্রীশ বর্ধন II ADRISH BARDHAN
- অনীশ দাস অপু II ANISH DAS APU
- অনীশ দেব II ANISH DEB
- অনুবাদ বই
- অন্নদাশঙ্কর রায় II ANNADASHANKAR RAY
- আগাথা ক্রিষ্টি II Agatha Christie
- আশাপূর্ণা দেবী
- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
- ইসলামী বই II ISLAMI BOOKS
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী II Upendrakishore Ray Chowdhury
- ঐতিহাসিক বই
- ওয়েস্টার্ন বই
- কবিতার বই
- কাজী নজরুল ইসলাম
- গজেন্দ্রকুমার মিত্র II GAJENDRAKUMAR MITRA
- জয় গোস্বামী II JOY GOSWAMI
- জীবন গঠনমূলক/মোটিভেশনাল বই II MOTIVATIONAL BOOKS
- জীবনী/আত্মজীবনী II BIOGRAPHY BOOKS
- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
- তিন গোয়েন্দা
- দস্যু বনহুর II DOSSU BANHUR II ROMENA AFAZ
- দীনেন্দ্রকুমার রায় II Dinendrokumar Roy
- দীনেশচন্দ্র সেন II DINESH CHANDRA SEN
- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
- নারায়ণ সান্যাল
- নীহাররঞ্জন গুপ্ত
- প্রফুল্ল রায়
- প্রেমেন্দ্র মিত্র
- ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
- বিমল কর
- বিমল মিত্র
- বুদ্ধদেব গুহ
- বুদ্ধদেব বসু II BUDDHADEB BASU
- মনোজ বসু II MANOJ BASU
- মহাশ্বেতা দেবী
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
- মাসুদ রানা/MASUD RANA SERIES
- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- রহস্য-রোমাঞ্চ/থ্রিলার/গোয়েন্দা কাহিনী
- লীলা মজুমদার
- শক্তিপদ রাজগুরু II SHAKTIPADA RAJGURU
- শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শামসুর রাহমান
- শিশুতোষ/কিশোর সাহিত্য
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
- শেখ আবদুল হাকিম II SHEIKH ABDUL HAKIM
- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
- সত্যজিৎ রায়
- সমরেশ বসু
- সমরেশ মজুমদার
- সাইমুম সিরিজ II SAIMUM SERIES
- সুচিত্রা ভট্টাচার্য
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
- সুবোধ ঘোষ II SUBODH GHOSH
- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী II Smaranjit Chakraborty
- স্বপন কুমার II SWAPAN KUMAR
- হরর কাহিনী/ভূতের বই
- হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
- হুমায়ূন আহমেদ
- হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড ll HENRY RIDER HAGGARD
- হেমেন্দ্রকুমার রায়
Thursday, November 21, 2024
Sunday, November 17, 2024
Sunday, November 10, 2024
পূর্ব-পশ্চিম - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
Saturday, November 9, 2024
Friday, November 8, 2024
সেই সময় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এই সেই সময় যখন কলকাতার বাবুসমাজ সুরা, নারী ও বুলবুলি-বিলাসে মগ্ন, যখন নব্যশিক্ষিত যুবকেরা প্রাণপণে ইংরেজ-অনুকরণে মত্ত, গ্রাম নিঃস্ব করে প্রজাশোষণের অর্থে চলেছে সংস্কৃতি চর্চা, সমাজ ও ধর্মসংস্কার, তরুণ বিদ্যাসাগর রাত্রি জেগে রেড়ির তেলের আলোয় রচনা করছেন বাংলা গদ্যভাষা, জেগে উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, এই সেই সময়...
যেটুকু তফাৎ তা হল, গবেষকের রচনায় প্রাণ থাকে না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেই প্রাণটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
লোটাকম্বল - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
'লোটাকম্বল' দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় পাঠকবর্গ এক ভিন্নতর স্বাদের লেখায় আপ্লুত হয়েছিলেন। অজস্র পত্রে তাঁরা সেই আনন্দজ্ঞাপন করেছিলেন।
প্রথম পর্ব শেষ হবার পর অসংখ্য অনুরোধ এসেছিল অনুরূপ একটি দ্বিতীয় পর্ব অবিলম্বে শুরু করার। কেন লোটাকম্বল এত জনপ্রিয় হয়েছিল! কীসের গুণে? নিছক হাস্যরস অথবা অন্য কিছু?
বাংলাসাহিত্যে হাসির গল্প অনেক লেখা হয়েছে। হাসির উপন্যাস একটি কি দুটি। তা-ও সীমিত পৃষ্ঠাসংখ্যায়। সুবৃহৎ একটি হাসির উপন্যাস দীর্ঘধারাবাহিকতায় প্রকাশের অনন্য দৃষ্টান্ত পাঠক-অভিনন্দনের অন্যতম কারণ হলেও, ভাল-লাগার আসল রহস্য হল, লোটাকম্বল মূল্যবোধের উপন্যাস, মানুষের অন্তর্মনের আধ্যাত্মিক সংকটের উপন্যাস। ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাড়িয়ে নিঃসঙ্গ এক প্রৌঢ়, হিমালয়ের মতো যাঁর ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব যাঁর আদর্শ নিষ্ঠা, আপাত কঠোর যেন প্রুসিয়ান জেনারাল অথচ ভেতরে ভেতরে কুসুম-কোমল। আর সেই মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান, মাঝে দুই পুরুষের ব্যবধান। পূর্বপুরুষ উত্তরপুরুষে সঞ্চারিত করতে চায় জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ আর মূল্যবোধ। মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে চায়। সেইশিক্ষা শুধু উপদেশের আকারে আসেনা, আসে ‘আপনি আচরিধর্ম’-এর পথ বেয়ে।
দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির ঠোকাঠুকির মধ্যে আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধমাতামহ। আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলে যিনি খুঁজে পেতে চান সেই চির-চাওয়া পরম পুরুষটিকে। সঞ্জীবের সার্থক সৃষ্টি এই দীর্ঘকাহিনী। হাসি, হিউমার, ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-সুখের টানাপোড়েনে তৈরি শাশ্বত জীবনবেদ।
Thursday, November 7, 2024
গর্ভধারিনী - সমরেশ মজুমদার
এক দুঃসাহসী ও অভিনব বিষয়বস্তু নিয়ে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবােধ নিয়ে নতুন পরীক্ষার ফলশ্রুতি এই গর্ভধারিণী উপন্যাস। অসম অর্থনৈতিক কাঠামােয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, তাদের মধ্যে একজন নারী, এক সময়ে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারও যেন নিজস্ব কোন দায় নেই, দেশটার ভালােমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দলগুলির ওপর দিয়ে। অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুঁজছে। এই ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে ঐ চারজন যুবক-যুবতী, পরিণামে তাদের আত্মগােপন করতে হলাে হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ী গ্রামে, যেখানে সভ্যতার নখ এখনাে আঁচড় কাটেনি। সেখানে শুরু হলাে তাদের একজনের, যে একমাত্র নারী তাদের দলে, তার-বিচিত্র আত্মত্যাগ ও সাধনা। এই উপন্যাস তাদের সকলের সেই স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনী। আশা করি সবারই ভালো লাগবে।
Wednesday, November 6, 2024
দূরবীন - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় দু-বছরেরও বেশি কাল ধরে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল 'দূরবীন', শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জোরালো, সংবেদনশীল কলমে অন্যতম মহৎ সৃষ্টি। চলমান শতাব্দীর দুইয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে আটের দশক পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের প্ৰেক্ষাপটে সামাজিক জীবনের যাবতীয় পরিবর্তনকে এক আশ্চর্য কৌতুহলকর বিশাল কাহিনীর মধ্য দিয়ে ধরে রাখার প্রয়াসেরই অভিনন্দিত ফলশ্রুতি 'দূরবীন' উপন্যাস।
তিন প্রজন্মের এই কাহিনীতে প্রথম প্রজন্মের প্রতিভূ জমিদার হেমকান্ত। এ-উপন্যাসের সূচনায় দেখা যায়, হেমকান্তের হাত থেকে কুয়োর বালতি জলে পড়ে গেছে, আর এই আপাততুচ্ছ ঘটনায় হেমকান্ত আক্রান্ত হচ্ছেন মৃত্যুচিন্তায়। বিপত্নীক হেমকান্ত ও রঙ্গময়ী নামের প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক পুরোহিত্যকন্যার, গোপন প্রণয়কাহিনী ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য পারিবারিক কাহিনী নিয়ে এ-উপন্যাসের প্রথম পর্যায়।
দ্বিতীয় প্রজন্মের নায়ক কৃষ্ণকান্ত। দেবোপম রূপ ও কঠোর চরিত্রবল বালক কৃষ্ণকান্তকে দাঁড় করিয়েছে পিতা হেমকাস্তের বিপরীত মেরুতে। স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ কৃষ্ণকাস্তের ব্ৰহ্মচর্য-গ্রহণ ও দেশভাগের পর তাঁর আমূল পরিবর্তন-এই নিয়ে এ-উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্য়ায়ের কাহিনী।
তৃতীয় ও শেষ প্রজন্মের নায়ক ধ্রুব, বিশ শতকের উপান্তপর্বে এক দিগভ্ৰষ্ট, উদ্ধত বিদ্রোহী যুবা। ধ্রুবর স্ত্রী রেমি, যার সঙ্গে এক অদ্ভুত সম্পর্ক তার। কখনও ভালবাসা, কখনও উপেক্ষা, কখনও-বা প্রবল বিরাগ। অথচ রেমির ভালোবাসা শাত-আঘাতেও অবিচল। একদিকে রেমির সঙ্গে সম্পর্ক অন্যদিকে পিতা কৃষ্ণকাস্তের মধ্যে সেই ব্ৰহ্মচারী ও স্বদেশের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণসত্তাটিকে খুঁজে না-পাওয়ার ব্যর্থতায় ক্ষতবিক্ষত ধ্রুবর আশ্চর্য কাহিনী নিয়েই শেষ পর্ব।
শুধু তিন প্রজন্মের তিন নায়কের ব্যক্তিগত কাহিনীর জন্যই নয়, এ-উপন্যাসের বিশাল প্রেক্ষাপটে আরও বহু বিচিত্র ও কৌতুহলকর শাখা-কাহিনী, এবং এর চালচিত্রে স্বদেশী আন্দোলন, দেশভাগ ও স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তাল দিনরাত্রির এক তাৎপর্যময় উপস্থাপনার জন্যও ‘দূরবীন’ চিহ্নিত হবে অবিস্মরণীয় সৃষ্টিরূপে।
শুধুদূরকেই কাছে আনে না, উল্টো করে ধরলে কাছের জিনিসও দূরে দেখায় দূরবীন। ‘দূরবীন’ উপন্যাসের নামকরণে যেমন সূক্ষ্মতা, রচনারীতিতেও তেমনই অভিনবত্ব এনেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দ্বিস্তর এই উপন্যাসে সেকাল ও একাল, অতীত ও বর্তমান এক অনন্য কৌশলে একাকার।
Tuesday, November 5, 2024
কঙ্কাবতী - ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
দারিদ্রের সঙ্গে কঠোর সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ত্রৈলোক্যনাথ সাহিত্যচর্চায় এসে পরিচিতি লাভ করেন রঙ্গ ব্যাঙ্গের একজন সার্থক স্রষ্ঠা রূপে। সমকালীন লেখকদের মতো সামাজিক উপন্যাস বা শুধুমাত্র বাস্তববাদী উপন্যাস না লিখে একি সাথে হাস্য রসের মাধ্যমে বিদ্রূপের তীর যেমন ছুঁড়েছেন তেমনি তার লেখায় উপস্থিত করেছেন ভূত প্রেত আর কাল্পনিক দৈত্য দানো। বাস্তব এবং কল্পনার মিশেলে অদ্ভুত এক মায়াজাল সৃষ্টি করে ত্রৈলোক্যনাথ পাঠককে আটকে রাখেন বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝামাঝি। বলা হয়ে থাকে তার এক পা ছিল বাস্তবে আর আরেক পা কল্পলোকে, তার প্রথম উপন্যাস কঙ্কাবতী(১৮৯২) কে নিজেই আখ্যায়িত করেছেন ‘উপকথার উপন্যাস’ বলে।
কঙ্কাবতী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উক্তি, “এইরূপ অদ্ভুত রূপকথা ভাল করিয়া লেখা বিশেষ ক্ষমতার কাজ। ...এতদিন পরে বাঙ্গালায় এমন লেখকের অভ্যুদয়...যাঁহার লেখা আমাদের দেশের বালক বালিকাদের এবং তাঁদের পিতামাতার মনোরঞ্জন করিতে পারিবে”।
উপকথার উপন্যাস কঙ্কাবতীতে লেখক কঙ্কাবতীকে নিয়ে আসেন রূপকথার জগত থেকে, কঙ্কাবতীর ভাই একটি আম এনে ঘরে রেখে বলল, যে এই আম খাবে আমি তাকেই বিয়ে করবো। ছেলেমানুষ কঙ্কাবতী সে কথা না জেনেই একদিন আমটি খেয়ে ফেললো, আর ভাই তখন তাকেই বিয়ে করবে বলে ঘোষণা দিলো। লজ্জায় অন্য কোন উপায় না পেয়ে কঙ্কাবতী নৌকা ভাসাল খিড়কি পুকুরের মাঝখানে আর রূপকথার এই সূত্র ধরেই উপন্যাসের শুরু। শুরুর এই অংশটুকু ছাড়া প্রথম ভাগে রচিত হয়েছে বাস্তব জীবনের গল্প, যে গল্পে কুসুমঘাটী গ্রামের বংশজ ব্রাহ্মন তনু রায়। তিন মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ছোট বাচ্চা মেয়ের নাম কঙ্কাবতী। মেয়েদের বিয়ে দেবার ব্যাপারে তনু রায়ের আবার পছন্দ ছিল একটু বয়স্ক জামাতা, ছোকরা জামাই গুলো একশত কি দুইশত টাকা দিয়াই বিবাহ করতে চায় বলে দুই মেয়েকে একটু বয়স্ক জামাই দেখেই হাজার টাকা গুনে বিয়ে দিয়েছেন, জামাইদের আর বয়স কতো? একজনের সত্তর আর আরেকজনের পঁচাত্তর। বাস্তব জীবনযাত্রার বাস্তব কিছু ঘটনা প্রবাহের মাঝেই লেখক তুলে এনেছেন মানুষের ভণ্ডামি, কুটিলতা আর নিষ্ঠুরতার কিছু চিত্র।
দ্বিতীয় ভাগে তিনি আমাদের নিয়ে যান রূপকথার রাজ্যে। কঙ্কাবতী নৌকা ভাসিয়েছে আর একে একে পুকুরপাড়ে এসে কঙ্কাবতীর বোন, ভাই, মা, বাবা ছন্দে ছন্দে কঙ্কাবতীকে ডাকছে আর কঙ্কাবতীর জবাবের সাথে সাথেই নৌকা একটু একটু করে মাঝ পুকুরে সরে যাচ্ছে, এই দিয়ে শুরু দ্বিতীয় ভাগ। দ্বিতীয় ভাগের রূপকথার গল্পে একে একে এসে হাজির হয় কাতলা মাছ, কাঁকড়া মহাশয়, ঝিনুক; আসে ভয়ঙ্কর দর্শন বাঘ, নাকেশ্বরী ভুতিনী, ঘ্যাঘো ভূত, ব্যাঙ সাহেব। মশা প্রজাতির মধ্যে কঙ্কাবতী খুঁজে পায় রক্তাবতীকে, দুইজন প্রানের বান্ধবী পাতিয়ে নাম দেয় ‘পচা জল’... মশার ছোট ভাই হাতি, খর্ব্বুর, খোক্কোশ, তাল পাতার সেপাই সহ আরো অনেকেই এসে উপস্থিত হয় গল্পের প্রয়োজনে। যখনি মনে হবে এতো শুধুই রূপকথা তখনি আবার ত্রৈলোক্যনাথ আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন বাস্তবে। রূপকথার ভূত প্রেত, অতি প্রাকৃত জীবজন্তুর কথা বলতে বলতেই তাদের সমাজ দর্শনের চিত্র তুলে ধরে ত্রৈলোক্যনাথ আঘাত হেনেছেন মানুষের সমাজের প্রচলিত নিয়ম কানুন আর বিধি নিষেধের উপর, বিদ্রূপ করেছেন তাদের যারা নিজেদের ইচ্ছা মতো বাণী কপচিয়ে শাস্ত্র বলে তাকে চালানোর চেষ্টা করে।
ত্রৈলোক্যনাথের বর্ণনা ভঙ্গী গল্প বলার মতো। সাধু ভাষায় লিখা হলেও সহজ, সরল, অনাড়ম্বর শব্দের ব্যবহারে মনে হবে সামনে বসিয়ে রেখে তিনি শ্রোতাকে গল্প শোনাচ্ছেন। কঙ্কাবতীর শেষে এসে বৈঠকি রীতিতেই ত্রৈলোক্যনাথ শেষ করে বলে গেছেন, তাহার পর? বার বার “তাহার পর তাহার পর” করিলে চলিবে না। দেখিতে দেখিতে পুস্তকখানা বৃহৎ হইয়া পড়িয়াছে। ইহার মূল্য দেয় কে তাহার ঠিক নাই, কাজেই তাড়াতাড়ি শেষ করিতে বাধ্য হইলাম।
তাহার পর কি হইলো? তাহার পর আমার গল্পটি ফুরাইলো। নোটে গাছটির কপালে যাহা লিখা ছিল, তাহাই ঘটিল।