প্রফেসর শঙ্কু কে? তিনি এখন কোথায়? এটুকু জানা গেছে যে তিনি একজন বৈজ্ঞানিক। কেউ কেউ বলে তিনি নাকি একটা ভীষণ পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আবার এও শোনা যায় যে তিনি কোনো অজ্ঞাত অঞ্চলে গা ঢাকা দিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন, সময় হলেই আত্মপ্রকাশ করবেন। প্রফেসর শঙ্কুর প্রতিটি ডায়েরিতে কিছু না কিছু আশ্চর্য অভিজ্ঞতার বিবরণ আছে। কাহিনীগুলো সত্য কি মিথ্যা, সম্ভব কি অসম্ভব, সে বিচার পাঠকরা করবেন!
Pages
- হোম
- অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
- অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় II ATIN BANDOPADHYAY
- অদ্রীশ বর্ধন II ADRISH BARDHAN
- অনীশ দাস অপু II ANISH DAS APU
- অনীশ দেব II ANISH DEB
- অনুবাদ বই
- অন্নদাশঙ্কর রায় II ANNADASHANKAR RAY
- আগাথা ক্রিষ্টি II Agatha Christie
- আশাপূর্ণা দেবী
- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
- ইসলামী বই II ISLAMI BOOKS
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী II Upendrakishore Ray Chowdhury
- ঐতিহাসিক বই
- ওয়েস্টার্ন বই
- কবিতার বই
- কাজী নজরুল ইসলাম
- গজেন্দ্রকুমার মিত্র II GAJENDRAKUMAR MITRA
- জয় গোস্বামী II JOY GOSWAMI
- জীবন গঠনমূলক/মোটিভেশনাল বই II MOTIVATIONAL BOOKS
- জীবনী/আত্মজীবনী II BIOGRAPHY BOOKS
- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
- তিন গোয়েন্দা
- দস্যু বনহুর II DOSSU BANHUR II ROMENA AFAZ
- দীনেন্দ্রকুমার রায় II Dinendrokumar Roy
- দীনেশচন্দ্র সেন II DINESH CHANDRA SEN
- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
- নারায়ণ সান্যাল
- নীহাররঞ্জন গুপ্ত
- প্রফুল্ল রায়
- প্রেমেন্দ্র মিত্র
- ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)
- বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
- বিমল কর
- বিমল মিত্র
- বুদ্ধদেব গুহ
- বুদ্ধদেব বসু II BUDDHADEB BASU
- মনোজ বসু II MANOJ BASU
- মহাশ্বেতা দেবী
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
- মাসুদ রানা/MASUD RANA SERIES
- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- রহস্য-রোমাঞ্চ/থ্রিলার/গোয়েন্দা কাহিনী
- লীলা মজুমদার
- শক্তিপদ রাজগুরু II SHAKTIPADA RAJGURU
- শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শামসুর রাহমান
- শিশুতোষ/কিশোর সাহিত্য
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
- শেখ আবদুল হাকিম II SHEIKH ABDUL HAKIM
- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
- সত্যজিৎ রায়
- সমরেশ বসু
- সমরেশ মজুমদার
- সাইমুম সিরিজ II SAIMUM SERIES
- সুচিত্রা ভট্টাচার্য
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
- সুবোধ ঘোষ II SUBODH GHOSH
- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী II Smaranjit Chakraborty
- স্বপন কুমার II SWAPAN KUMAR
- হরর কাহিনী/ভূতের বই
- হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
- হুমায়ূন আহমেদ
- হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড ll HENRY RIDER HAGGARD
- হেমেন্দ্রকুমার রায়
Friday, December 20, 2024
Sunday, December 15, 2024
ভৌতিক গল্পসমগ্র - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অসামান্য মুন্সিয়ানা অশরীরীদের অদ্ভুত জগৎ সৃষ্টিতে। কিশোর সাহিত্যে ‘ভূত’দের নিয়ে এক নতুন রস প্রবাহিত করেছেন। ভূত মানেই ভয়ঙ্কর নয়, ভূত মানুষের প্রতিবেশী, ভূত হতে পারে মজার, আবার তা সঙ্গে একটু ছোঁয়া থাকবে শিরশিরে অনুভূতিরও, শীর্ষেন্দুর ভূতেরা অনেকটা এইরকম। আর সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিটি গল্পই একেবারে নতুন স্বাদের, কোনও গল্পের সঙ্গেই তার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেইসব অদ্ভুতুড়ে ভূতেদের একজায়গায় জড়ো করে পরিবেশিত হলো ভৌতিক গল্পসম্ভার। এর কুড়িটা গল্পে রয়েছে কুড়ি রকম ভূত। ‘দুই পালোয়ান’থেকে শুরু করে ‘কোগ্রামের মধুপণ্ডিত’- বাকি নেই কেউ।
Friday, December 13, 2024
মাধুকরী - বুদ্ধদেব গুহ
পৃথু ঘোষ চেয়েছিল, বড় বাঘের মতো বাঁচবে। বড় বাঘের যেমন হতে হয় না কারও উপর নির্ভরশীল - না নারী, না সংসার, না গৃহ, না সমাজ - সেভাবেই বাঁচবে সে, স্বরাট, স্বয়ম্ভর হয়ে। তার বন্ধু ছিল তথাকথিত সভ্য সমাজের অপাঙক্তেয়রা। পৃথু ঘোষ বিশ্বাস করত, এই পৃথিবীতে এক নতুন ধর্মের দিন সমাসন্ন। সে-ধর্মে সমান মান-মৰ্য্যদা এবং সুখ-স্বাধীনতা পাবে প্রতিটি নারী-পুরুষ। বিশ্বাস করত, এই ছোট্ট জীবনে বাঁচার মতো বাঁচতে হবে প্রতিটি মানুষকে। শুধু প্রশ্বাস নেওয়া আর নিশ্বাস ফেলা বাঁচার সমার্থক নয়। কিন্তু সত্যিই কি এভাবে বাঁচতে পারবে পৃথু ঘোষ? সে কি জানবে না, বড় বাঘের মতো বাঁচতে পারে না কোনও নরম মানুষ? জন্ম থেকে আমৃত্যুকাল অগণিত নারী-পুরুষ-শিশুর হৃদয়ের, শরীরের দোরে-দোরে হাত পেতে ঘুরে-ঘুরে বেঁচে থাকাই মানুষের নিয়তি? এই পরিক্রমারই অন্য নাম মাধুকরী?
এক আলোড়ন-তোলা কাহিনীর মধ্য দিয়ে জীবনের নতুন ভাষ্যেরই এক অসাধারণ ভাষারূপ এ-যুগের অন্যতম জনপ্রিয় কথাকার বুদ্ধদেব গুহর এই বিশাল, বৰ্ণময়, বেগবান উপন্যাস। এ শুধু ইঞ্জিনিয়ার পৃথু ঘোষের বিচিত্র জীবনকাহিনী নয়, নয় “উওম্যানস লিব’-এর মূর্ত প্রতীক তার স্ত্রী রুষার দ্বন্দ্বময় জীবনের গল্প, এমনকি, জঙ্গলমহলের অকৃত্রিম কিছু শিকড় খুঁজেফেরা মানুষের অজানা উপাখ্যানও নয়। এ-সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়ে তবু এ-সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে 'মাধুকরী' এই শতকের মানুষের জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগামী প্রজন্মের মানুষের সার্থকভাবে বেঁচে থাকার ঠিকানা। এই কারণেই বুঝি এ-উপন্যাস উৎসর্গ করা হয়েছে 'একবিংশ শতাব্দীর নারী ও পুরুষদের' হাতে। সাধারণ পাঠকের মন ও বুদ্ধিজীবী পাঠকের মনন - দু-তন্ত্রীতেই একসঙ্গে ঝঙ্কার তোলার উপন্যাস 'মাধুকরী'। এর কাহিনী, ভাষা, স্টাইল, জীবনদর্শন, শ্লীলতা-অশ্লীলতার সীমারেখা - সবই নতুন। জীবনের প্রতি আসক্তি ও আসক্তির মধ্যে লুকিয়ে-থাকা বিতৃষ্ণাকে যে-চমকপ্ৰদ ভঙ্গিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ, যে-নৈপুণ্যে বর্ণনায় এনেছেন সূক্ষ্মতা, যে-কুশলতায় ছোট-বড় প্রতিটি চরিত্রকে দেখিয়েছেন চিরে-চিরে, যে-দক্ষতায় দেশি-বিদেশি অজস্ৰ কবিতার ব্যবহার - সে-সবই এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় পাঠককে। বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী সংযোজন ‘মাধুকরী'।
Wednesday, December 11, 2024
একশ বছরের সেরা ভৌতিক - সম্পাদনা: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও বারিদবরণ ঘোষ
ভূত প্রসঙ্গটাই আবহাওয়া বদলে দেয়, রহস্য ঘনীভূত করে তোলে, মানুষ নড়েচড়ে বসে৷ ভূত আছে কি নেই এই প্রশ্ন তো অবান্তর, কারণ কেউই জানে না তা। তবে ভূত আমাদের প্রিয় বিষয়। ভূত এবং ভৌত পরিমণ্ডল আমাদের জীবনের ধরাবাঁধা সীমানাকে প্রসারিত করে দেয়। ভূত মানে শুধু ভয় নয়, মজা, কল্পনার চিন্তার এবং অবশ্যই এক প্রয়োজনীয় অসঙ্গতি। রূপকথা, কল্পবিজ্ঞান বা নননেন্স ভার্সে যেমন লোকে যুক্তি-বিজ্ঞান খুঁজতে যায় না, তেমনি ভূতের গল্পেরও কিছু অধিকার আছে।
Tuesday, December 10, 2024
একান্ত - ইমদাদুল হক মিলন
ফোন নামিয়ে রেজা মনে মনে বলল, এতবার রিং হল ফোনটা কেউ ধরল না কেন! ফ্ল্যাটে কেউ নেই না কী! শাহিন কি আজও, বাইরে গেল! আজকাল দু'একদিন পর পরই কোথায় যায় সে! রেজা অফিসে এল আর সেও বাড়ি থেকে বেরুল। ব্যাপারটা কী!
রেজার ফ্ল্যাটে প্যারালাল লাইন করা দুটো টেলিফোন সেট, একটা তাদের বেডরুমে আরেকটা ডাইনিংস্পেসে। বেডরুমেরটা কর্ডলেস। রেজা কিংবা শাহিন ফ্ল্যাটে না থাকলে বেডরুম লক করা থাকে। তখন ফোন এলে ডাইনিংস্পেসেরটা ধরে জুলেখা....
Saturday, December 7, 2024
সাতকাহন - সমরেশ মজুমদার
এ উপন্যাসের কেন্দ্রচরিত্র সাহসী, স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এক মেয়ে, দীপা - দীপাবলী, যার নামের মধ্যেই নিহিত অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আভাস। নিয়ত সংগ্রামরতা প্রতিমার মতো সেই মেয়ে দীপা, আর চালচিত্রে একের পর এক বর্ণাঢ্য ছবি। উত্তরবাংলার চা-বাগান, গাছগাছালি আর আঙরাভাসা নদী দিয়ে সে চালচিত্রের সূচনা। দ্বিতীয় খন্ডে ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠেছে পঞ্চাশের কলকাতা ও শহরতলি, কো-এডুকেশন কলেজ, মেয়েদের হোস্টেল, কফি হাউস, সমকালীন ছাত্র-আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটভূমি, সর্বভারতীয় কর্মজীবনের পরিবেশ ও প্রতিকূলতার জীবন্ত চিত্রাবলি। স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি জীবনে স্বাধীকার অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রয়াসে মেয়েদের সাধ, সংকল্প ও সংগ্রামের এক জীবন্ত, ধারাবাহিক ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে সমরেশ মজুমদারের সুদীর্ঘ, সুকল্পিত, সুবিন্যস্ত এই উপন্যাস।
পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
'পার্থিব' উপন্যাসের লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।উপন্যাসটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। এর আগে ধারাবাহিক ভাবে 'দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে লেখক মানুষের নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন অত্যন্ত চমৎকার ভাবে। 'পার্থিব' মানে- পৃথিবী-সংক্রান্ত, জাগতিক, ইহকাল বুঝায়। 'পার্থিব' বিশাল এক উপন্যাস। ৭১৩ পৃষ্ঠা। এত বড় উপন্যাস কিন্তু পড়তে একটুও বিরক্ত লাগে না। আমি উপন্যাসটি এবার নিয়ে তিনবার পড়লাম। যত পড়ি তত ভালো লাগে। লেখক সহজ সরল ভাবে কি সুন্দর করেই না লিখে গেছেন! আমাদের দেশে কি বর্তমানে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাথে তুলনা করা যায় এমন কোনো লেখক আছেন?
পুরো উপন্যাসে অনেক গুলো চরিত্র। অথচ কোথাও একটুও জট পাকায় নি। এই বিশাল উপন্যাসে কে যে কেন্দ্রিয় চরিত্র সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। প্রতিটা চরিত্রই আমাকে মুগ্ধ করেছে। যখন যার অংশ পড়েছি তাকেই প্রধান চরিত্র বলে মনে হয়েছে। উপন্যাসটি পড়তে শুরু করলেই বুঝা যায় লেখক খুব দরদ দিয়ে, পরম মমতায় চরিত্র গুলো তৈরি করেছেন। প্রতিটা চরিত্রের প্রতি লেখক সমান ভালোবাসা দেখিয়েছেন। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে এমন হয়েছে- আমি যেন চরিত্র গুলোর সাথে মিশে গিয়েছি। তাদের আনন্দে আনন্দ পাই। তাদের কষ্টে পাই। লেখকের লেখার গুনের জন্য মনে হয় উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্র যেন আমি নিজ চোখে দেখছি।
Friday, December 6, 2024
অনি - সমরেশ মজুমদার
বইটির মুখবন্ধে সমরেশ মজুমদার যা বলেছেন...
'উত্তবাধিকার' উপন্যাসটির বিপুল জনপ্রিয়তা সত্বেও আমার মনে একটা অস্বস্তি থেকেই গিয়েছিল। আট থেকে পনেরর অনিকে তার সমবয়সী পাঠকের হাতে তুলে দিতে অনেক অভিভাবক দ্বিধা করছেন। বড়দের জন্যে লেখা উপন্যাসের জটিলতা ছোটদের বোঝার কথাও নয়, অথচ অনির ছেলেবেলা আমাদের সবার স্মরণীয় দিন।
আর এই কারণেই সমবয়সীদের হাতে তুলে দিতে নতুন করে সম্পাদিত হল 'অনি'। যে সোনার ছেলেবেলা তার অজস্র কৌতূহল, রেখাতে এবং সারল্য নিয়ে আমরা কাটিয়ে এসেছি তাই এখনকার কিশোরদের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি ধন্য।
আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি দশ বারো বছরের বুকে যে রোমান্টিক হৃদয় শব্দ করে চলে তা অনিরই হৃদয়ের প্রতিধ্বনি।
অগ্নিরথ - সমরেশ মজুমদার
উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ এইসব বইয়ের মাঝে চাপাপড়া অসাধারণ একটি বই সমরেশ মজুমদারের অগ্নিরথ।
কলকাতার একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে সায়ন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্যে দার্জিলিং চলে আসে কিশোর বয়সে।পাহাড় আর সমতলের জীবনধারার সমন্বয়ে উপন্যাসের ব্যপ্তি হলেও গল্পের সব চমক যেন লুকিয়ে আছে পাহাড়ে প্রতিটি ঢালে।
শুরুটা বলা যায় পাহাড়ের কোলে যিশুর মুর্তির কাছে নিভে যাওয়া মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। সেই সময় কিছু পাহাড়ি মানুষ দেখতে পায় অপার্থিব আলো যেন ঠিকরে আসছে সায়নের কাছ থেকে। তারা সায়নকে ঈশ্বরের আশীর্বাদপুত্র মনে করে দেবতার আসনে বসাতে চায় যার জীবন লিওকেমিয়ায় আক্রান্ত ।
অপরদিকে, কলকাতায় ভাঙ্গনের সুর তাদের একান্নবর্তী পরিবারে, যেখানে শুধু সায়নের মা নয় পরিবারের প্রতিটি নারী সদস্য বাস করেন পরিচয়হীন ভাবে। আর পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন তাদের স্বার্থপরতার রুপ দিয়ে হিংসা আর বিদ্বেষের আদিম পৃথিবীতে নিয়ে যেতে চায় তাদের পরিবারকে, বেড়াতে এসে তাই সায়ন নিজেকে পাহাড়ে খুঁজে পায়, আবার অসুস্থ হয়ে ফিরে আসে নিরাময়ে।
কলকাতার সে প্রাচীন পৃথিবী ছেড়ে সায়ন ধীরে ধীরে আপন হয়ে উঠে পাহাড়ের মানুষের মাঝে।
ডাক্তার আংকেল, পাদ্রী ব্রাউন, ম্যাথুস, ছোট বাহাদুর এবং নিরাময়কে ঘিরে বেঁচে থাকার অন্য পরিবেশে ভালোবাসার যিশু হয়ে উঠে মৃত্যুপথযাত্রী সায়ন।
পাহাড়ে প্রতিটি মানুষ সায়নের জন্যে হয়ে উঠে আপনজন, তাদের একজন হয়ে বিদেশী এলিজাবেথের সাথে লেগে পড়েন তাদের জীবনের মানউন্নয়নের কাজে। কিন্তু রাজনীতি এখানেও বাঁধসাধে । পথভ্রষ্ট কিছু তরুনের হাতে নির্মম পরিনতি নেমে আসে এলিজাবেথের উপর। স্বপ্নের কোন এক নির্জন পাহাড়ের মাঝে দাউদাউ করে ছুটে চলে বিবস্ত্র এলিজাবেথের দেহে অগ্নিরথ, বেঁচে থাকা হয় না সায়নের, এ যেন এক স্বপ্নের মৃত্যু লিউকোমিয়ায় মৃত্যুর পূর্বেই ।
অদ্ভুত আনন্দরসে ভরা এই উপন্যাস "অগ্নিরথ"।
Tuesday, December 3, 2024
মৌষলকাল - সমরেশ মজুমদার
মৌষলকাল - সমরেশ মজুমদার ১৯৭০-এর নকশাল রাজনীতিতে অনিমেষের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশি অত্যাচারে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কাহিনী তুমুল এক ইতিহাসের কথাই বলে। সমরেশ মজুমদার এই চরিত্রটিকে নিয়ে তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেছেন, উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ, যা ধারণ করে আছে পশ্চিমবঙ্গের অনতি-অতীতকালে রাজনৈতিক-সামাজিক সময়প্রবাহ। অনিমেষের বান্ধবী হিসেবে সময়ের সঙ্গে যুঝেছে মাধবীলতা। বাংলা কথাসাহিত্যে মাধবীলতা-অনিমেষ জুটি সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি। সময়ের ফসল হিসেবে এসেছে তাদের সন্তান অর্ক। বড় হয়ে অর্কও দুঃখী মানুষদের নিয়ে সাধ্যমতো স্বপ্নপ্রয়াসে জড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যর্থ হয়েছে যথারীতি। সর্বত্রই ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল হিংস্র থাবা নিয়ে তৈরি। প্রায় তিন দশক সময় অতিক্রম করে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন অনিমেষ-মাধবীলতা-অর্কের নতুন কাহিনী ‘মৌষলকাল’। এই উপন্যাসের আধার পশ্চিমবঙ্গের এক উত্তাল সময়।
রাজনৈতিক পালাবদলের সেই ইতিহাসের নানান বাঁকে উপস্থিত মাঝবয়সি অর্ক। স্বভাব-প্রতিবাদে, আবেগে, অস্পষ্ট ভালবাসায় অর্ক যেন এক অবাধ্য স্বর। মৌষল পর্বের পারস্পরিক অবিশ্বাসের দিনকালেও প্রৌঢ় অনিমেষ-মাধবীলতা ঝলসে ওঠে আর একবার। কেউ বিপ্লব-বিশ্বাস, কেউ-বা জীবন-বিশ্বাসে অটুট। কাহিনী নির্মাণের জাদুরক সমরেশ মজুমদারের অনবদ্য সৃষ্টি মৌষলকাল।
Monday, December 2, 2024
কালপুরুষ - সমরেশ মজুমদার
কালপুরুষ সমরেশ মজুমদারের ট্রিলোজি সিরিজের শেষ বই। উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ বই তিনটা নিয়ে এই ট্রিলোজি সিরিজ। কালপুরুষ উপন্যাসে অনিমেষ আর মাধবীলতার ভালোবাসার ফুল ফুটফুটে অর্ক’র জন্ম হয়। অর্ক নামটা মা মাধবীলতার দেয়া। অর্ক মানে সূর্য। অর্ক যেন তাদের নিস্তব্ধ জীবনে একফালি সূর্য।
ঈশ্বরপুকুর লেনের ঘুপচি ঘরে আশেপাশের শত কদর্যতার মাঝে বেড়ে ওঠা অর্ককে নিয়ে সবসময়ই ভয়ে থাকে মাধবীলতা। বস্তিতে থাকার মাশুল অবশ্য দিতেই হয় অনিমেষ আর মাধবীলতাকে। সংসার চালানোর চাপ আর ঋণের জালে জর্জরিত মাধবীলতা, পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু অসহায় অনিমেষের শত সতর্কতার পরও অর্ক আস্তে আস্তে বস্তির পরিবেশে আসক্ত হতে থাকে। মুখের ভাষা হয়ে যায় খিস্তি মেশানো। বন্ধু-বান্ধবদের প্ররোচনায় একসময় ভুল পথে পা বাড়ায় অর্ক। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সারাদিন রকে আড্ডা আর বখাটেপনা করে বেড়ানোই তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। বাবা অনিমেষকে কথায় কথায় অপমান করতেও ছাড়ে না অর্ক। বাবাকে এমন সব কথা সে বলে যা ছেলে হিসাবে কখনোই বলা উচিত নয়। অবশেষে অর্ক বিলুর সাথে ব্ল্যাক টিকেটের ব্যবসা শুরু করে।
সত্তর দশকের অপরিনামী রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় শেষ পর্বে কালবেলার নায়ক অনিমেষ মিত্র ছিলেন একজন নকশাল আন্দোলনকারী। ভার্সিটি জীবনের শেষ দিকে দেশটাকে বদলানোর উদ্দেশ্যে নকশাল আন্দোলনে যোগদান করে। যার ফলস্বরূপ তার ঠিকানা হয়ে উঠে কারাগার। জীবন থেকে আটটি বছর ছুড়ে ফেলে দিতে হয়, বেছে নিতে হয় পঙ্গুত্ব। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে সে কারো বোঝা হতে চায় নি। কিন্তু তার প্রিয়তমা মাধবীলতা তাকে ছেড়ে যেতে নারাজ। মাধবীলতা চায় নি তাদের পুত্র অর্ক, পিতৃ পরিচয় ছাড়া বেঁচে থাকুক। সে কাগজে-কলমে বিয়ে করে তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসটাকেও অপমান করতে চায় নি।
অনিমেষের চিকিৎসার খরচসহ তিনজনের ছোট্ট পরিবারটার সমস্ত খরচ মাধবীলতা একাই বহন করে চলে। মাধবীলতা একটা স্কুলে মাস্টারি করে। বাড়তি কিছু আয়ের জন্য টিউশনি করায়। সেই টাকা দিয়েই তাদের তিন জনের সংসার চলে কোনমতে। তাছাড়া অনিমেষকে সুস্থ করতেও মাধবীলতা প্রচুর টাকা খরচ করে। কিন্তু অনিমেষ সুস্থ হতে পারে না তেমন। অনিমেষের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ঋণও হয়ে যায়। মাধবীলতা নিজেকে পরিবারের জন্য উজাড় করতে থাকে। তাই না চাইতেও তাদের ঠিকানা হয়ে উঠে বস্তিতে। অনিমেষ আশা করেছিলো তার পুত্র অর্ক তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের নিশানটি শক্ত হাতে বয়ে নিয়ে চলবে। কিন্তু সমকালীন অন্তঃসারহীন কুটিল রাজনীতি এবং পঙ্কিল সমাজব্যবস্থা অর্ককে করে তুলেছিল অন্ধকার অসামাজিক রাজত্বের প্রতিনিধি। কিন্তু যেহেতু তার রক্তের মধ্যে ছিল অনিমেষের সুস্থ আদর্শবাদ এবং তার মা মাধবীলতার দৃঢ়তা ও পবিত্রতার সংমিশ্রিত উপাদান, সেই হেতু তার বোধোদয় ঘটতে বিলম্ব হয় নি।
একটা ঘটনায় সমাজের উচু তলার কিছু মানুষগুলোর আসল চেহারাটা সামনে আসে অর্কর। এইসব দেখেশুনে তীব্র প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে ওঠে অর্ক। নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে সমাজের এসব অসঙ্গতির সাথে কখনোই তাল মেলাবে না। সত্যকে সত্য, অন্যায়কে অন্যায়ই বলবে। বস্তির লোকজনকে সাথে নিয়ে নতুন এক আন্দোলনে সামিল হয় সে। এক পরিবার এক হাড়ি হিসেব করে পুরো বস্তিকে সাথে নিয়ে শুরু করে এক বিরল ধরনের কাজ। নির্দিষ্ট একটা অর্থের বিনিময়ে সারা মাস তিনবেলা সবাইকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নেয় সে।
এসব দেখেশুনে আশার সঞ্চার হয় অনিমেষ মাধবীলতার মনে। অর্কও আদর্শবান হয়ে উঠেছিল। এক ভিন্ন মানসিকতার সে আহ্বান শুনেছিলো চিরকালীন মানবতার। একদিকে সু্যোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল এবং অপরদিকে সুবিধাবাদী সমাজব্যবস্থার যুপকাষ্ঠে নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত কিছু মানুষ। অর্ক তাদের একত্রিত করে উদ্বুদ্ধ করেছিলো নতুনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তাদের সামনে তুলে ধরেছিলো আগামী পৃথিবীর সুন্দরতম এক মানচিত্র। কিন্তু ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল ও সমাজ অর্ককে অর্গলবদ্ধ করে সেই পৃথিবীর স্থানটি ভেঙে চুরমার করতে দ্বিধাবোধ করে নি। কিন্তু অর্ক যার অপর নাম সূর্য- তার আবির্ভাবকে কি চিরকালের মতো রুদ্ধ করে রাখা যায়?
কালপুরুষ উপন্যাসের সমাপ্তিতে মানবতার আহ্বানের প্রতিধ্বনি স্পষ্টতর। আর তাতেই উপন্যাসটি পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবিষ্ট হয়ে থাকতে হয় প্রতিটি পাঠকে। বইটি এখনো যারা পড়েন নি তারা সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন। খুব ভালো সময় কাটবে আপনার কালপুরুষ-এর সাথে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়!
কালবেলা - সমরেশ মজুমদার
সমরেশ মজুমদারের “কালবেলা” এমন একটি উপন্যাস যেখানে প্রেম এবং বিপ্লব একসাথে মিলেমিশে হয়েছে একাকার। “কালবেলা” - যার মানে অশুভ সময়। “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে। যেই চিত্রে আদর্শের পথে হাঁটতে গিয়ে বিপথগামী হয়েছে তৎকালীন অসংখ্য ভারতীয় তরুণ। তাদের মধ্যে অনিমেষও একজন। মূলত অনিমেষের হাত ধরেই সমগ্র উপন্যাসে সমরেশ মজুমদার তুলে ধরেছেন তৎকালীন সময়টিকে। আর অনিমেষের সঙ্গী হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন মাধবীলতাকে। অনিমেষ আর মাধবীলতার যে প্রেমের সম্পর্ক তা এই উপন্যাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে টপকিয়ে খুব সহজেই এটিকে একটি প্রেমের উপন্যাসে পরিণত করেছে। সুতরাং, “কালবেলা” যেমন একটি রাজনৈতিক উপন্যাস তেমনি একটি প্রেমের বা ভালোবাসারও উপন্যাস হিসেবেও এটি সম্পূর্ণ সার্থক। অবশ্য সমরেশ মজুমদার এটিকে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দেখতে নারাজ। তিনি এটিকে একটি ভালোবাসার উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই আগ্রহী।
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল অনিমেষ। প্রথমবারের মতো কলকাতায় এসেই অনিমেষ পায়ে গুলি খায় পুলিশের। এরপর ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে কলেজের বাম রাজনীতির সঙ্গে কিন্তু তাতে কেমন যেন খটকা থেকে যায় তার মনে। ফলে অস্ত্র হাতে বিপ্লবের পথে হাঁটতে শুরু করে। বিপ্লবের আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে অনিমেষ বুঝতে পারে যে দাহ্যবস্তুর কোন সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নেই। এই বিপ্লবে জড়িয়ে যাবার আগেই অনিমেষের জীবনে জড়িয়ে পড়ে একজন রমণী। যার নাম মাধবীলতা। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী এই মাধবীলতা। যে জীবনের সবকিছু দিয়ে ভালোবেসে গিয়েছে অনিমেষকে। তার জন্য ভালোবাসাটিই মনে হয় আসল বিষয়। বিনিময়ে আশা করেনি কিছুই কিন্তু ছেঁড়ে আসে সব অতীত, সব বন্ধন এবং পেছনের সব সম্পর্ককে শুধুমাত্র এই ভালোবাসার টানে। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে যেমন অবাক হয়েছি অনিমেষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে তেমনি অবাক হয়েছি মাধবীলতার ক্ষেত্রেও। মাধবীলতার ক্ষেত্রে আমি হয়তো আরও একধাপ এগিয়ে ছিলাম। কারণ এই চরিত্রটিকে যতই আবিস্কার করেছি ততই আমার কাছে মনে হয়েছে এ মাধবীলতা যেন আমারই কাঙ্ক্ষিত প্রেমিকা। বারবার প্রেমে পড়েছি আমি এই মাধবীলতার। নিজের সর্বস্ব দিয়ে এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বলে মাধবীলতা শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের মাথা উঁচু রাখে, নিজের ভালোবাসাকে সমুন্নত রাখে। ভালোবাসার মাঝে যেন বিপ্লবের আরেক নাম এই মাধবীলতা।
সমরেশ মজুমদারের লেখা “আট কুঠুরি নয় দরজা” এবং “গর্ভধারিণী” বেশ অনেক আগেই পড়েছিলাম। এ দুটো উপন্যাসই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল উনার ভক্ত হবার জন্য। বিশেষ করে “গর্ভধারিণী” উপন্যাসটি ছিল অসাধারণ একটি সৃষ্টি। একই ধারায় উনার “কালবেলা” উপন্যাসটিকেও আমি সম্পূর্ণ একটি সার্থক উপন্যাসের মর্যাদা দিব। কারণ উনার এই উপন্যাসে যেমন উঠে এসেছে সত্তরের দশকের স্বাধীন ভারতবর্ষের চিত্র, তেমনি উঠে এসেছে সেই সময়টি। একই সাথে তৎকালীন ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সাথে উঠে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমের চিত্র। একদিকে যেমন প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে তেমনি আরেক দিকে তুলে ধরা হয়েছে শ্রেণীহীন নতুন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখা একদল তরুণের আন্দোলনের চিত্র। রাজনীতির পথগুলো কতটা তির্যক তা এই উপন্যাসটি পড়লেই বুঝা যায়। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি একজন নারীর জন্য তৎকালীন সময়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে এখানে। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের উঁচু, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মানসিকতার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে এসেছে এই সমগ্র উপন্যাসে। বাদ যায়নি একজন নর এবং নারীর পারস্পারিক বিশ্বাসে ভালোবাসার চিত্রটিও। সমরেশ মজুমদারের অসাধারণ এক সৃষ্টি এই “কালবেলা”।
Monday, November 25, 2024
২৫টি জমজমাট রহস্য – সম্পাদনা : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
রহস্যের প্রতি টান সব বয়েসের মানুষের? সভ্যতার শুরুতে বহু রকম রহস্য ছিল, যেমন মেঘের ডাক, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা, এই রকম আরও কত কী? তার কিছু কিছু বুঝতে বুঝতে এগিয়েছে মানব সভ্যতা। এখনো কত কিছু রয়ে গেছে অজানা, বিজ্ঞান যেসব জায়গায় পৌঁছুতে পারেনি।
মানুষের জীবনে সবচেয়ে রহস্যময় তার হৃদয় বা মস্তিষ্ক। মানুষ নিজের হৃদয় বা মস্তিষ্ককেও এখনো ভালো করে চেনে না। তাই মানুষের জীবনযাত্রার বাঁকে বাঁকে রয়েছে কত না রহস্য। পৃথিবীর রহস্য আর জীবন-রহস্য এই নিয়ে রচিত হয় অজস্র কাহিনি। বাংলায় তার থেকেই বেছে বেছে পঁচিশটি গল্পের সংকলন এখানে প্রস্তুত করা হলো। এই সব গল্প পাঠের রোমাঞ্চ কখনো পুরোনো হবার নয়। আশা করি এই সংকলনটি পাঠকরা শয্যার পাশে রাখবেন।
Thursday, November 21, 2024
যাও পাখি - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
খুনে ডাকাত বহেরু একখানা গাঁ তৈরি করেছিল। নিজেই তার নাম রেখেছিল বহেরু গাঁ। সেখানে মানুষের চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে সে। যত কিম্ভূত মানুষ ধরে এনে আশ্রয় দিত সেই বহেরু গাঁয়ে। সংসারে বনিবনার অভাবে একদা এই গাঁয়ে চলে এলেন ব্রজগোপাল। এ-সংসারে কিছু চাওয়ার নেই তাঁর। ডায়েরির সাদা পাতায় তবু তিনি লিখে রেখেছিলেন--ভগবান, উহারা যেন সুখে থাকে। নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ ও দিশাহীনতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্রজগোপাল কি এক অসংশয়িত উত্তরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন? সংসার-উদাসী বাবার খোঁজে বহেরুতে এসেছিল সোমেন। বাবার রোজনামচায় লেখা ওই পঙক্তি-রহস্য বুকে নিয়ে সে কলকাতায় ফিরে গেল। বহেরু গাঁ থেকে ফিরে তাকে যেতে হলই, কেননা প্রত্যেক মানুষেরই একটা ফেরার জায়গা চাই। যদিও সেই কলকাতায়, যেখানে অন্যরকম জীবন, হাজার রকম মানুষ। গ্রাম ও কলকাতা--এই দুই বৃত্তের টানাপোড়েন এবং সংলগ্নতায় সৃষ্ট এই কাহিনী নিষ্ঠুর সময়ের অভিঘাতে পীড়িত ব্যক্তিসত্তার সম্পূর্ণ অ্যালবাম। এর বর্ণাট্য বিস্তারে, ঘাত-প্রতিঘাতে, বিরহ-মিলনে অসংখ্য ছবির মধ্যে জগৎ ও জীবন উৎকীর্ণ হয়ে আছে। এক মহৎ উপন্যাসের নাম ‘যাও পাখি’।
Sunday, November 17, 2024
উত্তরাধিকার - সমরেশ মজুমদার
দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারের অসাধারণ এক সৃষ্টি ‘উত্তরাধিকার’ উপন্যাস। প্রথমে এই উপন্যাসটি কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো, যা পরে বই আকারে বের হয়। বইয়ের মূল চরিত্র অনিমেষ। ‘উত্তরাধিকার’ অনিমেষের শৈশব থেকে তারুণ্যে পদার্পণের গল্প।অনিমেষের রাজনৈতিক মতাদর্শের সূচনাটা মূলত এই বইতেই। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন কালবেলা ও কালপুরুষের মতো কালজয়ী উপন্যাস। ‘উত্তরাধিকার’ উপন্যাসের পটভূমিতে রয়েছে ডুয়ার্সের চা বাগান এবং জলপাইগুড়ি শহর।
শান্ত নিরিবিলি স্বর্গছেঁড়া চা বাগান, ওপারে খুঁটিমারির জঙ্গল, এপারে আঙরাভাসা নদী, মাথার ওপরে ভুটানের পাহাড় থেকে ভেসে আসা বিষণ্ন মেঘের দল, মাঠ পেরিয়ে আসাম রোড, মদেসিয়া কুলিদের লাইন এই সব কিছু জুড়েই অনিমেষের শৈশব। ‘উত্তরাধিকার’ নিয়ে কিছু বলার শুরুতেই স্বর্গছেঁড়া চা বাগানের এই প্রশান্ত রূপটা চোখের সামনে ছবির চেয়েও বাস্তব রূপে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
চা বাগানের রাস্তায় ছুটে বেড়ানো শিশু অনিমেষ একটু একটু করে বড় হতে থাকে। চা বাগানের ব্রিটিশ কোম্পানিতে চাকরি করা তার দাদা সরিৎশেখরের পরিচিতির সুবাদে সেও চা বাগানে বড়বাবুর নাতি বলেই পরিচিত। তখন ছিল এক অস্থির সময়, যখন সবেমাত্র ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্কুলে অনিমেষের হাতেই প্রথম পতাকা উত্তোলন হয়। শিশু অনিমেষের মনে দেশপ্রেমের বীজ বপনের শুরু সেখানেই।
অনিমেষকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দাদা সরিৎশেখরের, যা উত্তরবঙ্গের এই স্বর্গছেঁড়ার চা বাগানে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই অবসরগ্রহণের পর বিধবা মেয়ে হেমলতা ও অনিমেষকে নিয়ে জলপাইগুড়ির নতুন বাড়িতে শুরু করেন নতুন জীবন। জলপাইগুড়ি- যেখানে অনিমেষ বাস্তবতার প্রথম স্বাদ পায়। চা বাগানের স্নিগ্ধ পরিবেশে জন্মানো ও শৈশব কাটানো কোমল হৃদয়ের অনিমেষ যেন ঘোরের মধ্যে চলে যায়। সবচেয়ে আপন মানুষ মা মাধুরী, যার কাছে ছোট্ট অনিমেষ অকপটে সব বলতে পারত, আর বাবা মহীতোষ, যার সঙ্গে আপাত দূরত্বের সম্পর্ক, অবাঙালি ঝাড়িকাকুর স্নেহ, ভবানী মাস্টার, বিশু বাপীর সঙ্গে ছুটে বেড়ানো, খেলার সাথী সীতা, যাকে অনিমেষ মনের মধ্যে গোপনে ধারণ করে- সবকিছুকে পেছনে রেখে জলপাইগুড়ি শহরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করে অনিমেষ।
নতুন জীবনের শুরুতেই ঘটে দুর্ঘটনা। অনিমেষের মা মাধুরীর অকাল মৃত্যুতে সবাই তখন দিশেহারা। ফেলে আসা স্বর্গছেঁড়ার স্মৃতির তাড়না আর মায়ের শূন্যতায় পিসিমার আঁচলে সর্বোচ্চ আশ্রয় পায় অনিমেষ। দাদুর কঠোরতা ও দৃঢ়তার আদর্শের মাঝে একটু একটু করে এগিয়ে চলে সে।
পরিচিত হতে থাকে নতুন নতুন চরিত্রের সাথে৷ রম্ভা, উর্বশী, মেনকা, মুভিং ক্যাসেল, তপুপিসী- এমন বিচিত্র সব নারীর সংস্পর্শে আসে, যারা সবাই কাছাকাছি থেকেও ভিন্ন জীবনধারার ভিন্ন মতাদর্শের এবং তারা সবাই তার জীবনে শিক্ষণীয় প্রভাব ফেলে৷ বিরামবাবু, নিশীথবাবু, প্রিয়তোষ- যাদের কাছে তার রাজনীতির হাতেখড়ি, রাজনীতির আড়ালের রূপ দেখা। স্কুলের বন্ধু মন্টু, তপন- যাদের কাছ থেকে জীবনের অনেক অপ্রিয় বিষয়ের ধারণা পায় সে। অনিমেষ তার নতুন পরিবেশ আর জীবনের বয়ঃসন্ধিতে এসে যেন একসাথে বহু বিষয়ের প্যাঁচে পড়ে যায়। নারী-পুরুষের সম্পর্ক, পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনীতি সব কিছুর ছোঁয়া একসাথে পেতে শুরু করে কিশোর অনিমেষ।
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যার জন্য এত দিনের অপেক্ষা! বাস্তবতার নিষ্ঠুর ধাক্কায় উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত কিশোর থেকে তরুণ হয়ে ওঠে অনিমেষ, আছড়ে পড়ে কলকাতার উত্তাল রাজপথে, যেখানে আগামী দিনের জন্য সবার অধীর অপেক্ষা।
স্বর্গছেঁড়া-জলপাইগুড়ি-কলকাতা। লেখক দক্ষতার সাথে অনেকগুলো জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বিপন্ন অস্থির উত্তাল এক সময়ের গল্প বলে গেছেন, অনিমেষের বেড়ে ওঠার গল্প বলেছেন।
জন্ম থেকেই পরিবারের যে মানুষগুলোকে ঘিরে অনিমেষ বড় হয়েছে, কালের পরিক্রমায় জীবনের বাঁকে বাঁকে তাদের নিজেদের মধ্যকার বাঁধন আলগা হয়েছে, অনেকে সেই জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, কেউ সাময়িকভাবে কেউ বা চিরতরে। যারা আছে ক্লান্তি এসে ভর করেছে তাদের প্রত্যেকের উপর। বুকে আগলে তিলতিল করে মানুষ করেছেন যারা অনিমেষকে, সময়ের সাথে তাদের পরিবর্তন খুব চোখে পড়ার মতো - শেষকালে এসে বিষণ্ন, জরাগ্রস্ত, অতীত জীবনের নেশায় বুঁদ তারা এক অজানা অপেক্ষায়। পরিবারের বাইরে গিয়েও অন্য যেসব চরিত্র তারা কেউই অপ্রয়োজনীয় নয়। চরিত্রগুলোর স্থায়িত্ব স্বল্প সময়ের জন্য হলেও প্রতিটি চরিত্র অনুভূতির ভেতর নাড়া দিয়ে যায়।
রাজনীতি নিয়ে আছে অনেক আলোচনা অনেক দ্বিধাদ্বন্দ অনেক ঘৃণা অনেক সম্ভাবনা, যদিও সব কিছু অনিমেষের অনভিজ্ঞ চোখ দিয়েই দেখতে হবে এবং তার কৌতূহল আর দ্বিধাদ্বন্দে ভোগা মন দিয়েই পড়তে হবে৷ কংগ্রেস আর কম্যুনিস্ট পার্টি, তৎকালীন বড় বড় নেতাদের প্রভাব, বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর গোপন মিটিং, সংগ্রাম, ক্ষমতায় থাকা দলের দেশের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা সব কিছু মিলে যেনো তালগোল পাকিয়ে যায় অনিমেষের সাথে পাঠকেরও।
অনিমেষ নিজেকে বারবার নিজের প্রশ্নের সম্মুখীন করে। বুকের ভেতর ফুলে ফেঁপে উঠা যে দেশপ্রেম সেটি প্রমাণের শ্রেষ্ঠ উপায় কি শুধুই নির্বিকার থাকা? নাকি নিজের দেশপ্রেমের উর্ধ্বে গিয়ে দেশপ্রেমের সাথে স্বার্থকে গুলিয়ে ফেলে তা তুলে ধরার চেষ্টায় নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া! এইসব প্রশ্নের দোলাচলে পরিচিত কিছু মানুষকেই যেন মাঝে মাঝে অপরিচিত বলে মনে হয়।
এসব প্রশ্ন শুধু অনিমেষের নয়, পাঠকের মধ্যেও জাগ্রত হতে বাধ্য। যে পরিস্থিতির মধ্যে অনিমেষ নিজেকে আবিষ্কার করে, সেটি অপরিচিত নয়। কারণ, জীবনের কোনো একপর্যায়ে আমরা সবাই এই পথ অতিক্রম করি। লেখকের স্বতঃস্ফূর্ত লেখায় ধাপে ধাপে ছোট ছোট ঘটনার উপর ভিত্তি করে উঠে আসে অনিমেষের মানবিক গুণাবলির চর্চা, ভালো মন্দের পার্থক্য করতে শেখা, নিজের একটি পরিচয় গড়ে তুলবার প্রচেষ্টা, ঘাবড়ে গিয়েও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অর্জনে পিছু হটে না অনিমেষ। এই কাহিনী এক তরুণের আত্মজিজ্ঞাসার কাহিনী, আত্ম-অনুসন্ধানের কাহিনী।
রিভিউটি লিখেছেন হাকিম মাহি, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
Sunday, November 10, 2024
পূর্ব-পশ্চিম - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
দেশবিভাগ নিয়ে তেমন স্মরণীয় উপন্যাস বাংলাভাযায় লেখা হয়নি। দু-পার বাংলায় ছড়ানাে সমান্তরাল বাঙালিজীবন নিয়েও না। সেই অপূর্ণতাকেই দূর করল এই বিশিষ্ট, ব্যতিক্রমী ও বড়-মাপের উপন্যাস।বিশাল ক্যানভাসে চিত্রিত এই উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ একইসঙ্গে ছুঁয়ে আছে এপার এবং ওপার বাংলা। শুরু সেই পঞ্চাশের মধ্যভাগে। দু-বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের পালাবদলের স্রোত কীভাবে এসে মিশেছে এই আশির দশকের মােহনায়, এ-উপন্যাস তার এক জীবন্ত দলিল।
দুই বাংলার দুই পরিবারকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাসে বিশেষ কোনও চরিত্রকে মূল চরিত্র বলা যাবে না। একই সঙ্গে অনেকগুলি প্রধান চরিত্র। এইসব চরিত্রের কেউ-কেউ আবার পূর্ব বা পশ্চিম বাংলার গণ্ডিতেই আবর্তিত নয়, আমেরিকাতেও গেছে। ফলে, কলকাতার কফি হাউসের পাশাপাশি কখনও আবার আমেরিকার চোখ-ধাঁধানাে শহরের কথা এই উপন্যাসে। পূর্ব-পশ্চিমএই নামকরণেও যেন নিহিত ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা। এ-উপন্যাসে শুধুই পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার কথা নয়। পূর্ব গােলার্ধ ও পশ্চিম গােলার্ধের বৃহত্তর পটভূমিও এর অন্তর্গত। আবার মানুষের জীবন ও মনে যে পূর্ব ও পশ্চিম, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উত্থান-পতন, সূচনা ও দিনাবসানতাও যেন সূক্ষ্মভাবে প্রতিফলিত এই নামকরণে। 'সেই সময়'-এর লেখকের কলমে এই সময় নিয়ে লেখা 'পূর্ব-পশ্চিম' বাঙালি জীবনের আধুনিক গদ্য মহাকাব্য।
Saturday, November 9, 2024
প্রথম আলো - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে যে-কোনও সমাজের মাঝেমাঝে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিকে পিছু ফিরে দেখা দরকার। আমাদের দেশের অনতি-অতীতের পুনর্দর্শন ও পুনর্বিচার নিয়েই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ণাঢ্য, বেগবান উপন্যাস ‘প্রথম আলো’। উপন্যাসটিতে আছেন রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসু, ভগিনী নিবেদিতা, অবনীন্দ্রনাথ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অর্ধেন্দু মুস্তাফীর মত খ্যাতনামা সব ঐতিহাসিক চরিত্র।
তা সত্ত্বেও ‘প্রথম আলো’র মূল নায়ক- সময়। আঠারোশো তিরাশি থেকে উনিশশো সাত পর্যন্ত যে-সময়কাল বিস্তৃত। যখন হঠাৎ যেন ঘুম ভেঙে নবজাগরিত কিছু মানুষ আবিষ্কার করছে দেশ নামের এক ভাবসত্তাকে, অনুভব করছে পরাধীনতার গ্লানি। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম আন্দোলন, মহেন্দ্রলাল সরকারদের বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারা, পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ ও প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের ভূমিকা, রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের নানা রূপান্তর, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে নবীনদের মতবিরোধ, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সূচনা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা সৃষ্টি ইত্যাদি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ অনুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে।
মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি ও বিশালতা নিয়ে এই উপন্যাসে কাহিনি পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায়, তারপর সমগ্র ভারতে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ‘প্রথম আলো’ পাঠকচিত্ত জয় করেছে কবেই, কালজয়ের সামর্থ্যেও সে বলীয়ান।
Friday, November 8, 2024
সেই সময় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এই সেই সময় যখন কলকাতার বাবুসমাজ সুরা, নারী ও বুলবুলি-বিলাসে মগ্ন, যখন নব্যশিক্ষিত যুবকেরা প্রাণপণে ইংরেজ-অনুকরণে মত্ত, গ্রাম নিঃস্ব করে প্রজাশোষণের অর্থে চলেছে সংস্কৃতি চর্চা, সমাজ ও ধর্মসংস্কার, তরুণ বিদ্যাসাগর রাত্রি জেগে রেড়ির তেলের আলোয় রচনা করছেন বাংলা গদ্যভাষা, জেগে উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, এই সেই সময়...
হ্যাঁ, একটি বিশেষ সময়ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সুকীর্তিত উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র। তিনি নিজেও এ-উপন্যাস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন: "আমার কাহিনীর পটভূমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দ। এবং এই কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়।" লিখেছেন, "সময়কে রক্ত-মাংসে জীবিত করতে হলে অন্তত একটি প্রতীক চরিত্র গ্রহণ করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক। তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার বৈপরীত্য, শেষ দিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে মার্তৃরূপ দর্শন এবং অদ্ভুত ধরনের মৃত্যু, সবই যে সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা, আশা করি তা আর বিশদভাবে এখানে বলার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় কথা শুধু এই যে, নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল-মৃত অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল আছে। অন্য কোনো প্রসিদ্ধ পুরুষের নাম বা জীবনকাহিনী আমি বদল করিনি...."।
সত্যিই তাই। নাটকের শুরুতে যেমন দেওয়া থাকে পাত্রপাত্রীর নাম ও পরিচয়, তেমনভাবে এই বিপুল বর্ণাঢ্য উপন্যাসের গোড়াতেই যদি দেওয়া থাকত নবীনকুমারের সমকালীন চরিত্রাবলির নাম, বস্তুতই বিস্ময়কর মনে হত সেই তালিকা। মাইকেল, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, হেয়ার সাহেব, দেবেন ঠাকুর—কে নেই! সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দীই যেন নানান চরিত্র হয়ে চোখের সামনে জীবন্ত।
যেটুকু তফাৎ তা হল, গবেষকের রচনায় প্রাণ থাকে না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেই প্রাণটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এক দুরন্ত সময়ের জীবন্ত চলচ্চিত্র 'সেই সময়'। বঙ্কিম ও আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত এই গ্রন্থের দুটি খণ্ডকে এক মলাটের মধ্যে এনে সম্পূর্ণ নতুন আকারে প্রকাশিত হল এই রাজসংস্করণ। এ-গ্রন্থের বিপুল সমাদর ও স্থায়ী কীর্তিমূল্যের কথা ম্ননে রেখে এ এক আনন্দ-শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লোটাকম্বল - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
'লোটাকম্বল' দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় পাঠকবর্গ এক ভিন্নতর স্বাদের লেখায় আপ্লুত হয়েছিলেন। অজস্র পত্রে তাঁরা সেই আনন্দজ্ঞাপন করেছিলেন। প্রথম পর্ব শেষ হবার পর অসংখ্য অনুরোধ এসেছিল অনুরূপ একটি দ্বিতীয় পর্ব অবিলম্বে শুরু করার। কেন লোটাকম্বল এত জনপ্রিয় হয়েছিল! কীসের গুণে? নিছক হাস্যরস অথবা অন্য কিছু?
বাংলাসাহিত্যে হাসির গল্প অনেক লেখা হয়েছে। হাসির উপন্যাস একটি কি দুটি। তা-ও সীমিত পৃষ্ঠাসংখ্যায়। সুবৃহৎ একটি হাসির উপন্যাস দীর্ঘধারাবাহিকতায় প্রকাশের অনন্য দৃষ্টান্ত পাঠক-অভিনন্দনের অন্যতম কারণ হলেও, ভাল-লাগার আসল রহস্য হল, লোটাকম্বল মূল্যবোধের উপন্যাস, মানুষের অন্তর্মনের আধ্যাত্মিক সংকটের উপন্যাস। ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাড়িয়ে নিঃসঙ্গ এক প্রৌঢ়, হিমালয়ের মতো যাঁর ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব যাঁর আদর্শ নিষ্ঠা, আপাত কঠোর যেন প্রুসিয়ান জেনারাল অথচ ভেতরে ভেতরে কুসুম-কোমল। আর সেই মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান, মাঝে দুই পুরুষের ব্যবধান। পূর্বপুরুষ উত্তরপুরুষে সঞ্চারিত করতে চায় জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ আর মূল্যবোধ। মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে চায়। সেইশিক্ষা শুধু উপদেশের আকারে আসেনা, আসে ‘আপনি আচরিধর্ম’-এর পথ বেয়ে।
দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির ঠোকাঠুকির মধ্যে আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধমাতামহ। আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলে যিনি খুঁজে পেতে চান সেই চির-চাওয়া পরম পুরুষটিকে। সঞ্জীবের সার্থক সৃষ্টি এই দীর্ঘকাহিনী। হাসি, হিউমার, ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-সুখের টানাপোড়েনে তৈরি শাশ্বত জীবনবেদ।
Thursday, November 7, 2024
গর্ভধারিনী - সমরেশ মজুমদার
এক দুঃসাহসী ও অভিনব বিষয়বস্তু নিয়ে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবােধ নিয়ে নতুন পরীক্ষার ফলশ্রুতি এই গর্ভধারিণী উপন্যাস। অসম অর্থনৈতিক কাঠামােয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, তাদের মধ্যে একজন নারী, এক সময়ে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারও যেন নিজস্ব কোন দায় নেই, দেশটার ভালােমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দলগুলির ওপর দিয়ে। অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুঁজছে। এই ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে ঐ চারজন যুবক-যুবতী, পরিণামে তাদের আত্মগােপন করতে হলাে হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ী গ্রামে, যেখানে সভ্যতার নখ এখনাে আঁচড় কাটেনি। সেখানে শুরু হলাে তাদের একজনের, যে একমাত্র নারী তাদের দলে, তার-বিচিত্র আত্মত্যাগ ও সাধনা। এই উপন্যাস তাদের সকলের সেই স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনী। আশা করি সবারই ভালো লাগবে।
Wednesday, November 6, 2024
দূরবীন - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় দু-বছরেরও বেশি কাল ধরে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল 'দূরবীন', শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জোরালো, সংবেদনশীল কলমে অন্যতম মহৎ সৃষ্টি। চলমান শতাব্দীর দুইয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে আটের দশক পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের প্ৰেক্ষাপটে সামাজিক জীবনের যাবতীয় পরিবর্তনকে এক আশ্চর্য কৌতুহলকর বিশাল কাহিনীর মধ্য দিয়ে ধরে রাখার প্রয়াসেরই অভিনন্দিত ফলশ্রুতি 'দূরবীন' উপন্যাস।
তিন প্রজন্মের এই কাহিনীতে প্রথম প্রজন্মের প্রতিভূ জমিদার হেমকান্ত। এ-উপন্যাসের সূচনায় দেখা যায়, হেমকান্তের হাত থেকে কুয়োর বালতি জলে পড়ে গেছে, আর এই আপাততুচ্ছ ঘটনায় হেমকান্ত আক্রান্ত হচ্ছেন মৃত্যুচিন্তায়। বিপত্নীক হেমকান্ত ও রঙ্গময়ী নামের প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক পুরোহিত্যকন্যার, গোপন প্রণয়কাহিনী ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য পারিবারিক কাহিনী নিয়ে এ-উপন্যাসের প্রথম পর্যায়।
দ্বিতীয় প্রজন্মের নায়ক কৃষ্ণকান্ত। দেবোপম রূপ ও কঠোর চরিত্রবল বালক কৃষ্ণকান্তকে দাঁড় করিয়েছে পিতা হেমকাস্তের বিপরীত মেরুতে। স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ কৃষ্ণকাস্তের ব্ৰহ্মচর্য-গ্রহণ ও দেশভাগের পর তাঁর আমূল পরিবর্তন-এই নিয়ে এ-উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্য়ায়ের কাহিনী।
তৃতীয় ও শেষ প্রজন্মের নায়ক ধ্রুব, বিশ শতকের উপান্তপর্বে এক দিগভ্ৰষ্ট, উদ্ধত বিদ্রোহী যুবা। ধ্রুবর স্ত্রী রেমি, যার সঙ্গে এক অদ্ভুত সম্পর্ক তার। কখনও ভালবাসা, কখনও উপেক্ষা, কখনও-বা প্রবল বিরাগ। অথচ রেমির ভালোবাসা শাত-আঘাতেও অবিচল। একদিকে রেমির সঙ্গে সম্পর্ক অন্যদিকে পিতা কৃষ্ণকাস্তের মধ্যে সেই ব্ৰহ্মচারী ও স্বদেশের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণসত্তাটিকে খুঁজে না-পাওয়ার ব্যর্থতায় ক্ষতবিক্ষত ধ্রুবর আশ্চর্য কাহিনী নিয়েই শেষ পর্ব।
শুধু তিন প্রজন্মের তিন নায়কের ব্যক্তিগত কাহিনীর জন্যই নয়, এ-উপন্যাসের বিশাল প্রেক্ষাপটে আরও বহু বিচিত্র ও কৌতুহলকর শাখা-কাহিনী, এবং এর চালচিত্রে স্বদেশী আন্দোলন, দেশভাগ ও স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তাল দিনরাত্রির এক তাৎপর্যময় উপস্থাপনার জন্যও ‘দূরবীন’ চিহ্নিত হবে অবিস্মরণীয় সৃষ্টিরূপে।
শুধুদূরকেই কাছে আনে না, উল্টো করে ধরলে কাছের জিনিসও দূরে দেখায় দূরবীন। ‘দূরবীন’ উপন্যাসের নামকরণে যেমন সূক্ষ্মতা, রচনারীতিতেও তেমনই অভিনবত্ব এনেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দ্বিস্তর এই উপন্যাসে সেকাল ও একাল, অতীত ও বর্তমান এক অনন্য কৌশলে একাকার।
Tuesday, November 5, 2024
কঙ্কাবতী - ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
দারিদ্রের সঙ্গে কঠোর সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ত্রৈলোক্যনাথ সাহিত্যচর্চায় এসে পরিচিতি লাভ করেন রঙ্গ ব্যাঙ্গের একজন সার্থক স্রষ্ঠা রূপে। সমকালীন লেখকদের মতো সামাজিক উপন্যাস বা শুধুমাত্র বাস্তববাদী উপন্যাস না লিখে একি সাথে হাস্য রসের মাধ্যমে বিদ্রূপের তীর যেমন ছুঁড়েছেন তেমনি তার লেখায় উপস্থিত করেছেন ভূত প্রেত আর কাল্পনিক দৈত্য দানো। বাস্তব এবং কল্পনার মিশেলে অদ্ভুত এক মায়াজাল সৃষ্টি করে ত্রৈলোক্যনাথ পাঠককে আটকে রাখেন বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝামাঝি। বলা হয়ে থাকে তার এক পা ছিল বাস্তবে আর আরেক পা কল্পলোকে, তার প্রথম উপন্যাস কঙ্কাবতী(১৮৯২) কে নিজেই আখ্যায়িত করেছেন ‘উপকথার উপন্যাস’ বলে।
কঙ্কাবতী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উক্তি, “এইরূপ অদ্ভুত রূপকথা ভাল করিয়া লেখা বিশেষ ক্ষমতার কাজ। ...এতদিন পরে বাঙ্গালায় এমন লেখকের অভ্যুদয়...যাঁহার লেখা আমাদের দেশের বালক বালিকাদের এবং তাঁদের পিতামাতার মনোরঞ্জন করিতে পারিবে”।
উপকথার উপন্যাস কঙ্কাবতীতে লেখক কঙ্কাবতীকে নিয়ে আসেন রূপকথার জগত থেকে, কঙ্কাবতীর ভাই একটি আম এনে ঘরে রেখে বলল, যে এই আম খাবে আমি তাকেই বিয়ে করবো। ছেলেমানুষ কঙ্কাবতী সে কথা না জেনেই একদিন আমটি খেয়ে ফেললো, আর ভাই তখন তাকেই বিয়ে করবে বলে ঘোষণা দিলো। লজ্জায় অন্য কোন উপায় না পেয়ে কঙ্কাবতী নৌকা ভাসাল খিড়কি পুকুরের মাঝখানে আর রূপকথার এই সূত্র ধরেই উপন্যাসের শুরু। শুরুর এই অংশটুকু ছাড়া প্রথম ভাগে রচিত হয়েছে বাস্তব জীবনের গল্প, যে গল্পে কুসুমঘাটী গ্রামের বংশজ ব্রাহ্মন তনু রায়। তিন মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ছোট বাচ্চা মেয়ের নাম কঙ্কাবতী। মেয়েদের বিয়ে দেবার ব্যাপারে তনু রায়ের আবার পছন্দ ছিল একটু বয়স্ক জামাতা, ছোকরা জামাই গুলো একশত কি দুইশত টাকা দিয়াই বিবাহ করতে চায় বলে দুই মেয়েকে একটু বয়স্ক জামাই দেখেই হাজার টাকা গুনে বিয়ে দিয়েছেন, জামাইদের আর বয়স কতো? একজনের সত্তর আর আরেকজনের পঁচাত্তর। বাস্তব জীবনযাত্রার বাস্তব কিছু ঘটনা প্রবাহের মাঝেই লেখক তুলে এনেছেন মানুষের ভণ্ডামি, কুটিলতা আর নিষ্ঠুরতার কিছু চিত্র।
দ্বিতীয় ভাগে তিনি আমাদের নিয়ে যান রূপকথার রাজ্যে। কঙ্কাবতী নৌকা ভাসিয়েছে আর একে একে পুকুরপাড়ে এসে কঙ্কাবতীর বোন, ভাই, মা, বাবা ছন্দে ছন্দে কঙ্কাবতীকে ডাকছে আর কঙ্কাবতীর জবাবের সাথে সাথেই নৌকা একটু একটু করে মাঝ পুকুরে সরে যাচ্ছে, এই দিয়ে শুরু দ্বিতীয় ভাগ। দ্বিতীয় ভাগের রূপকথার গল্পে একে একে এসে হাজির হয় কাতলা মাছ, কাঁকড়া মহাশয়, ঝিনুক; আসে ভয়ঙ্কর দর্শন বাঘ, নাকেশ্বরী ভুতিনী, ঘ্যাঘো ভূত, ব্যাঙ সাহেব। মশা প্রজাতির মধ্যে কঙ্কাবতী খুঁজে পায় রক্তাবতীকে, দুইজন প্রানের বান্ধবী পাতিয়ে নাম দেয় ‘পচা জল’... মশার ছোট ভাই হাতি, খর্ব্বুর, খোক্কোশ, তাল পাতার সেপাই সহ আরো অনেকেই এসে উপস্থিত হয় গল্পের প্রয়োজনে। যখনি মনে হবে এতো শুধুই রূপকথা তখনি আবার ত্রৈলোক্যনাথ আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন বাস্তবে। রূপকথার ভূত প্রেত, অতি প্রাকৃত জীবজন্তুর কথা বলতে বলতেই তাদের সমাজ দর্শনের চিত্র তুলে ধরে ত্রৈলোক্যনাথ আঘাত হেনেছেন মানুষের সমাজের প্রচলিত নিয়ম কানুন আর বিধি নিষেধের উপর, বিদ্রূপ করেছেন তাদের যারা নিজেদের ইচ্ছা মতো বাণী কপচিয়ে শাস্ত্র বলে তাকে চালানোর চেষ্টা করে।
ত্রৈলোক্যনাথের বর্ণনা ভঙ্গী গল্প বলার মতো। সাধু ভাষায় লিখা হলেও সহজ, সরল, অনাড়ম্বর শব্দের ব্যবহারে মনে হবে সামনে বসিয়ে রেখে তিনি শ্রোতাকে গল্প শোনাচ্ছেন। কঙ্কাবতীর শেষে এসে বৈঠকি রীতিতেই ত্রৈলোক্যনাথ শেষ করে বলে গেছেন, তাহার পর? বার বার “তাহার পর তাহার পর” করিলে চলিবে না। দেখিতে দেখিতে পুস্তকখানা বৃহৎ হইয়া পড়িয়াছে। ইহার মূল্য দেয় কে তাহার ঠিক নাই, কাজেই তাড়াতাড়ি শেষ করিতে বাধ্য হইলাম।
তাহার পর কি হইলো? তাহার পর আমার গল্পটি ফুরাইলো। নোটে গাছটির কপালে যাহা লিখা ছিল, তাহাই ঘটিল।