Pages

Thursday, January 2, 2025

আত্মকথা - আবুল মনসুর আহমদ

 

আত্মকথা - আবুল মনসুর আহমদ

দীর্ঘদিন পর একটা আত্মজীবনী শেষ করে মনে হল নাহ,জীবনকথা লিখবার হলে এভাবেই লিখতে হয়, এমনতরভাবেই গোছাতে হয়। শুধু আমিত্বে আত্মের কথা বলা সম্পূর্ণ হয় না, আমরা'য় নিমজ্জিতে পূর্ণতা পায় আত্মকথা। সেই পূর্ণতাকে আরো রাঙিয়ে তোলে, আত্মকথার রচিয়তা যে যুগের সন্তান, সেই সময়ের আর্থসামাজিক জীবন যখন অমলিনভাবে উপস্থাপিত হয় লেখাতে, স্মৃতিতে।

সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আইনজীবী এবং আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের "আত্মকথা " বাঙালি মুসলমানের সময়কে ধারণ করেছে যে সময়ে হয়েছে দেশভাগ, হয়েছে সাম্প্রদায়িক তিক্ততা, বেড়েছে ক্রোশ ক্রোশ দূরত্ব। বেশকিছু বেসিক প্রশ্নের মাধ্যমে, ঘটনা বর্ণনার প্রেক্ষিতে মনে বদ্ধমূল কিছু ধারণায় ধাক্কা দিয়েছেন আবুল মনসুর আহমদ। যেমনঃ বাটোয়ারাপূর্ব সাহিত্যে বাঙালি মুসলমান নাই। অথচ বাঙালি মুসলমানরাই ছিল সংখ্যাগুরু। কেন নাই? এক সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়ের ভালো মানতে রাজি না। কেন? এমনই বাঙালি মুসলমানের হালঃ

"আরেকটি মজার ব্যাপার এখানে উল্লেখ না করিয়া পারিতেছি না বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনিলাম, কলিকাতার বেশ্যারাও মুসলমান খরিদ্দার গ্রহণ করে না । পরে এই কথার এইরূপ ব্যাখা শুনিলাম যে মুসলমান খরিদ্দারদিগকেও "হিন্দু বেশে" অর্থাৎ ধুতি পরিয়া বেশ্যাবাড়িতে যাইতে হয়। " ( পৃষ্ঠা ১৭৭)

আত্মজীবনী হিসেবে এর একটি বিশেষত্ব অধ্যায়ভিত্তিক আকারে তা লেখা। সাধুভাষায় পুরো বই। অথচ পড়তে গিয়ে তা টেরই পাইনি। খুবই সুলিখিত।

জনাব আবুল মনসুর তাঁর বইতে অনেক অজানা তথ্য, ঘটনার কথা লিখেছেন। যেকোনো কৌতূহলী পাঠকমাত্রই তা লুফে নেবে। যেমনঃ দ্বিতীয়পর্যায়ে নবযুগ পত্রিকার সম্পাদনা করছেন আবুল মনসুর। কিন্তু সম্পাদক হিসেবে কাজী নজরুলের নাম ছাপা হত। এই সময়েরই ঘটনা, তখনও নজরুল অসুস্থ হননি। পড়ুন মনসুর সাহেবের জবানিতে,

"ইতিমধ্যে নজরুল ইসলাম সাহেবের মধ্যে একটু-একটু মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দিল। আগেই শুনিয়াছিলাম, তিনি বরদাবাবু নামে জনৈক হিন্দু যোগীর নিকট তান্ত্রিক যোগ সাধনা শুরু করিয়াছেন।" ( পৃষ্ঠা ২৯৭)

আবুল মনসুর শতভাগ রাজনীতিক তা পুরো বই পড়তে গিয়ে মাথায় রেখেছিলাম। তাঁর নীতি বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি হিন্দু বাঙালি হতে আলাদা। তাই তাদের কথাসাহিত্য প্রভৃতিও আলাদা হবে ইত্যাদি তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। লিখেছেনও তা সোজাসুজি। তবে কি মনসুর সাহেব সবক্ষেত্রে ঘটনা বয়ানে সাধুতা রক্ষা করেছেন বলতে পারিনা। কেননা পুরো বই পড়ার পর বাঙালি মুসলমান সন্তান আবুল মনসুর আহমদকে অনেকখানি ভুল-ত্রুটির ঊর্ধে বোধ হয়। তাতেই ফিকে হয়ে আসে আত্মজীবনী লিখবার অন্যতম শর্তঃ নিজের প্রতি সৎ থেকে যতদূর সম্ভব নিরপেক্ষভাবে স্মৃতিকে ঘাঁটিয়ে তার বর্ণনা লেখা।

তবুও এক মুসলমান কংগ্রেসীর, এক কৃষক-প্রজা আন্দোলন কর্মীর, এক সুসাহিত্যিক এবং একজন রাজনীতিবিদের কলমে নিজের সময়ের ছবিকে অঙ্কন যথেষ্ট সুখপাঠ্য হয়েছে তা অস্বীকার করা মিথ্যার সমতুল্য হবে।

বইটি পড়তে বা ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন...



Friday, December 20, 2024

শঙ্কু সমগ্র - সত্যজিৎ রায়

প্রফেসর শঙ্কু কে? তিনি এখন কোথায়? এটুকু জানা গেছে যে তিনি একজন বৈজ্ঞানিক। কেউ কেউ বলে তিনি নাকি একটা ভীষণ পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আবার এও শোনা যায় যে তিনি কোনো অজ্ঞাত অঞ্চলে গা ঢাকা দিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন, সময় হলেই আত্মপ্রকাশ করবেন। প্রফেসর শঙ্কুর প্রতিটি ডায়েরিতে কিছু না কিছু আশ্চর্য অভিজ্ঞতার বিবরণ আছে। কাহিনীগুলো সত্য কি মিথ্যা, সম্ভব কি অসম্ভব, সে বিচার পাঠকরা করবেন!

শঙ্কু সমগ্র - সত্যজিৎ রায়







Sunday, December 15, 2024

ভৌতিক গল্পসমগ্র - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অসামান্য মুন্সিয়ানা অশরীরীদের অদ্ভুত জগৎ সৃষ্টিতে। কিশোর সাহিত্যে ‘ভূত’দের নিয়ে এক নতুন রস প্রবাহিত করেছেন। ভূত মানেই ভয়ঙ্কর নয়, ভূত মানুষের প্রতিবেশী, ভূত হতে পারে মজার, আবার তা সঙ্গে একটু ছোঁয়া থাকবে শিরশিরে অনুভূতিরও, শীর্ষেন্দুর ভূতেরা অনেকটা এইরকম। আর সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিটি গল্পই একেবারে নতুন স্বাদের, কোনও গল্পের সঙ্গেই তার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেইসব অদ্ভুতুড়ে ভূতেদের একজায়গায় জড়ো করে পরিবেশিত হলো ভৌতিক গল্পসম্ভার। এর কুড়িটা গল্পে রয়েছে কুড়ি রকম ভূত। ‘দুই পালোয়ান’থেকে শুরু করে ‘কোগ্রামের মধুপণ্ডিত’- বাকি নেই কেউ।

 

 

 

Friday, December 13, 2024

মাধুকরী - বুদ্ধদেব গুহ

পৃথু ঘোষ চেয়েছিল, বড় বাঘের মতো বাঁচবে। বড় বাঘের যেমন হতে হয় না কারও উপর নির্ভরশীল - না নারী, না সংসার, না গৃহ, না সমাজ - সেভাবেই বাঁচবে সে, স্বরাট, স্বয়ম্ভর হয়ে। তার বন্ধু ছিল তথাকথিত সভ্য সমাজের অপাঙক্তেয়রা। পৃথু ঘোষ বিশ্বাস করত, এই পৃথিবীতে এক নতুন ধর্মের দিন সমাসন্ন। সে-ধর্মে সমান মান-মৰ্য্যদা এবং সুখ-স্বাধীনতা পাবে প্রতিটি নারী-পুরুষ। বিশ্বাস করত, এই ছোট্ট জীবনে বাঁচার মতো বাঁচতে হবে প্রতিটি মানুষকে। শুধু প্রশ্বাস নেওয়া আর নিশ্বাস ফেলা বাঁচার সমার্থক নয়। কিন্তু সত্যিই কি এভাবে বাঁচতে পারবে পৃথু ঘোষ? সে কি জানবে না, বড় বাঘের মতো বাঁচতে পারে না কোনও নরম মানুষ? জন্ম থেকে আমৃত্যুকাল অগণিত নারী-পুরুষ-শিশুর হৃদয়ের, শরীরের দোরে-দোরে হাত পেতে ঘুরে-ঘুরে বেঁচে থাকাই মানুষের নিয়তি? এই পরিক্রমারই অন্য নাম মাধুকরী?

মাধুকরী - বুদ্ধদেব গুহ

এক আলোড়ন-তোলা কাহিনীর মধ্য দিয়ে জীবনের নতুন ভাষ্যেরই এক অসাধারণ ভাষারূপ এ-যুগের অন্যতম জনপ্রিয় কথাকার বুদ্ধদেব গুহর এই বিশাল, বৰ্ণময়, বেগবান উপন্যাস। এ শুধু ইঞ্জিনিয়ার পৃথু ঘোষের বিচিত্র জীবনকাহিনী নয়, নয় “উওম্যানস লিব’-এর মূর্ত প্রতীক তার স্ত্রী রুষার দ্বন্দ্বময় জীবনের গল্প, এমনকি, জঙ্গলমহলের অকৃত্রিম কিছু শিকড় খুঁজেফেরা মানুষের অজানা উপাখ্যানও নয়। এ-সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়ে তবু এ-সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে 'মাধুকরী' এই শতকের মানুষের জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আগামী প্রজন্মের মানুষের সার্থকভাবে বেঁচে থাকার ঠিকানা। এই কারণেই বুঝি এ-উপন্যাস উৎসর্গ করা হয়েছে 'একবিংশ শতাব্দীর নারী ও পুরুষদের' হাতে। সাধারণ পাঠকের মন ও বুদ্ধিজীবী পাঠকের মনন - দু-তন্ত্রীতেই একসঙ্গে ঝঙ্কার তোলার উপন্যাস 'মাধুকরী'। এর কাহিনী, ভাষা, স্টাইল, জীবনদর্শন, শ্লীলতা-অশ্লীলতার সীমারেখা - সবই নতুন। জীবনের প্রতি আসক্তি ও আসক্তির মধ্যে লুকিয়ে-থাকা বিতৃষ্ণাকে যে-চমকপ্ৰদ ভঙ্গিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ, যে-নৈপুণ্যে বর্ণনায় এনেছেন সূক্ষ্মতা, যে-কুশলতায় ছোট-বড় প্রতিটি চরিত্রকে দেখিয়েছেন চিরে-চিরে, যে-দক্ষতায় দেশি-বিদেশি অজস্ৰ কবিতার ব্যবহার - সে-সবই এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় পাঠককে। বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী সংযোজন ‘মাধুকরী'।



Wednesday, December 11, 2024

একশ বছরের সেরা ভৌতিক - সম্পাদনা: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও বারিদবরণ ঘোষ

ভূত প্রসঙ্গটাই আবহাওয়া বদলে দেয়, রহস্য ঘনীভূত করে তোলে, মানুষ নড়েচড়ে বসে৷ ভূত আছে কি নেই এই প্রশ্ন তো অবান্তর, কারণ কেউই জানে না তা। তবে ভূত আমাদের প্রিয় বিষয়। ভূত এবং ভৌত পরিমণ্ডল আমাদের জীবনের ধরাবাঁধা সীমানাকে প্রসারিত করে দেয়। ভূত মানে শুধু ভয় নয়, মজা, কল্পনার চিন্তার এবং অবশ্যই এক প্রয়োজনীয় অসঙ্গতি। রূপকথা, কল্পবিজ্ঞান বা নননেন্স ভার্সে যেমন লোকে যুক্তি-বিজ্ঞান খুঁজতে যায় না, তেমনি ভূতের গল্পেরও কিছু অধিকার আছে।

একশ বছরের সেরা ভৌতিক - সম্পাদনা: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও বারিদবরণ ঘোষ




Tuesday, December 10, 2024

একান্ত - ইমদাদুল হক মিলন

ফোন নামিয়ে রেজা মনে মনে বলল, এতবার রিং হল ফোনটা কেউ ধরল না কেন! ফ্ল্যাটে কেউ নেই না কী! শাহিন কি আজও, বাইরে গেল! আজকাল দু'একদিন পর পরই কোথায় যায় সে! রেজা অফিসে এল আর সেও বাড়ি থেকে বেরুল। ব্যাপারটা কী!

রেজার ফ্ল্যাটে প্যারালাল লাইন করা দুটো টেলিফোন সেট, একটা তাদের বেডরুমে আরেকটা ডাইনিংস্পেসে। বেডরুমেরটা কর্ডলেস। রেজা কিংবা শাহিন ফ্ল্যাটে না থাকলে বেডরুম লক করা থাকে। তখন ফোন এলে ডাইনিংস্পেসেরটা ধরে জুলেখা....

একান্ত - ইমদাদুল হক মিলন







Saturday, December 7, 2024

সাতকাহন - সমরেশ মজুমদার

এ উপন্যাসের কেন্দ্রচরিত্র সাহসী, স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এক মেয়ে, দীপা - দীপাবলী, যার নামের মধ্যেই নিহিত অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আভাস। নিয়ত সংগ্রামরতা প্রতিমার মতো সেই মেয়ে দীপা, আর চালচিত্রে একের পর এক বর্ণাঢ্য ছবি। উত্তরবাংলার চা-বাগান, গাছগাছালি আর আঙরাভাসা নদী দিয়ে সে চালচিত্রের সূচনা। দ্বিতীয় খন্ডে ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠেছে পঞ্চাশের কলকাতা ও শহরতলি, কো-এডুকেশন কলেজ, মেয়েদের হোস্টেল, কফি হাউস, সমকালীন ছাত্র-আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটভূমি, সর্বভারতীয় কর্মজীবনের পরিবেশ ও প্রতিকূলতার জীবন্ত চিত্রাবলি। স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি জীবনে স্বাধীকার অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রয়াসে মেয়েদের সাধ, সংকল্প ও সংগ্রামের এক জীবন্ত, ধারাবাহিক ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে সমরেশ মজুমদারের সুদীর্ঘ, সুকল্পিত, সুবিন্যস্ত এই উপন্যাস।

সাতকাহন - সমরেশ মজুমদার





পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

'পার্থিব' উপন্যাসের লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।উপন্যাসটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। এর আগে ধারাবাহিক ভাবে 'দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে লেখক মানুষের নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন অত্যন্ত চমৎকার ভাবে। 'পার্থিব' মানে- পৃথিবী-সংক্রান্ত, জাগতিক, ইহকাল বুঝায়। 'পার্থিব' বিশাল এক উপন্যাস। ৭১৩ পৃষ্ঠা। এত বড় উপন্যাস কিন্তু পড়তে একটুও বিরক্ত লাগে না। আমি উপন্যাসটি এবার নিয়ে তিনবার পড়লাম। যত পড়ি তত ভালো লাগে। লেখক সহজ সরল ভাবে কি সুন্দর করেই না লিখে গেছেন! আমাদের দেশে কি বর্তমানে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাথে তুলনা করা যায় এমন কোনো লেখক আছেন?

পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

পুরো উপন্যাসে অনেক গুলো চরিত্র। অথচ কোথাও একটুও জট পাকায় নি। এই বিশাল উপন্যাসে কে যে কেন্দ্রিয় চরিত্র সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। প্রতিটা চরিত্রই আমাকে মুগ্ধ করেছে। যখন যার অংশ পড়েছি তাকেই প্রধান চরিত্র বলে মনে হয়েছে। উপন্যাসটি পড়তে শুরু করলেই বুঝা যায় লেখক খুব দরদ দিয়ে, পরম মমতায় চরিত্র গুলো তৈরি করেছেন। প্রতিটা চরিত্রের প্রতি লেখক সমান ভালোবাসা দেখিয়েছেন। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে এমন হয়েছে- আমি যেন চরিত্র গুলোর সাথে মিশে গিয়েছি। তাদের আনন্দে আনন্দ পাই। তাদের কষ্টে পাই। লেখকের লেখার গুনের জন্য মনে হয় উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্র যেন আমি নিজ চোখে দেখছি।



Friday, December 6, 2024

অনি - সমরেশ মজুমদার

বইটির মুখবন্ধে সমরেশ মজুমদার যা বলেছেন...

'উত্তবাধিকার' উপন্যাসটির বিপুল জনপ্রিয়তা সত্বেও আমার মনে একটা অস্বস্তি থেকেই গিয়েছিল। আট থেকে পনেরর অনিকে তার সমবয়সী পাঠকের হাতে তুলে দিতে অনেক অভিভাবক দ্বিধা করছেন। বড়দের জন্যে লেখা উপন্যাসের জটিলতা ছোটদের বোঝার কথাও নয়, অথচ অনির ছেলেবেলা আমাদের সবার স্মরণীয় দিন।

আর এই কারণেই সমবয়সীদের হাতে তুলে দিতে নতুন করে সম্পাদিত হল 'অনি'। যে সোনার ছেলেবেলা তার অজস্র কৌতূহল, রেখাতে এবং সারল্য নিয়ে আমরা কাটিয়ে এসেছি তাই এখনকার কিশোরদের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি ধন্য।

আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি দশ বারো বছরের বুকে যে রোমান্টিক হৃদয় শব্দ করে চলে তা অনিরই হৃদয়ের প্রতিধ্বনি।

অনি - সমরেশ মজুমদার





অগ্নিরথ - সমরেশ মজুমদার

উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ এইসব বইয়ের মাঝে চাপাপড়া অসাধারণ একটি বই সমরেশ মজুমদারের অগ্নিরথ। 

কলকাতার একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে সায়ন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্যে দার্জিলিং চলে আসে কিশোর বয়সে।পাহাড় আর সমতলের জীবনধারার সমন্বয়ে উপন্যাসের ব্যপ্তি হলেও গল্পের সব চমক যেন লুকিয়ে আছে পাহাড়ে প্রতিটি ঢালে।

অগ্নিরথ - সমরেশ মজুমদার

শুরুটা বলা যায় পাহাড়ের কোলে যিশুর মুর্তির কাছে নিভে যাওয়া মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। সেই সময় কিছু পাহাড়ি মানুষ দেখতে পায় অপার্থিব আলো যেন ঠিকরে আসছে সায়নের কাছ থেকে। তারা সায়নকে ঈশ্বরের আশীর্বাদপুত্র মনে করে দেবতার আসনে বসাতে চায় যার জীবন লিওকেমিয়ায় আক্রান্ত ।   

অপরদিকে, কলকাতায় ভাঙ্গনের সুর তাদের একান্নবর্তী পরিবারে, যেখানে শুধু সায়নের মা নয় পরিবারের প্রতিটি নারী সদস্য বাস করেন পরিচয়হীন ভাবে। আর পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন তাদের স্বার্থপরতার রুপ দিয়ে হিংসা আর বিদ্বেষের আদিম পৃথিবীতে নিয়ে যেতে চায় তাদের পরিবারকে, বেড়াতে এসে তাই সায়ন নিজেকে পাহাড়ে খুঁজে পায়, আবার অসুস্থ হয়ে ফিরে আসে নিরাময়ে। 

কলকাতার সে প্রাচীন পৃথিবী ছেড়ে সায়ন ধীরে ধীরে আপন হয়ে উঠে পাহাড়ের মানুষের মাঝে। 

ডাক্তার আংকেল, পাদ্রী ব্রাউন, ম্যাথুস, ছোট বাহাদুর এবং নিরাময়কে ঘিরে বেঁচে থাকার অন্য পরিবেশে ভালোবাসার যিশু হয়ে উঠে মৃত্যুপথযাত্রী সায়ন। 

পাহাড়ে প্রতিটি মানুষ সায়নের জন্যে হয়ে উঠে আপনজন, তাদের একজন হয়ে বিদেশী এলিজাবেথের সাথে লেগে পড়েন তাদের জীবনের মানউন্নয়নের কাজে। কিন্তু রাজনীতি এখানেও বাঁধসাধে । পথভ্রষ্ট কিছু তরুনের হাতে নির্মম পরিনতি নেমে আসে এলিজাবেথের উপর। স্বপ্নের কোন এক নির্জন পাহাড়ের মাঝে দাউদাউ করে ছুটে চলে বিবস্ত্র এলিজাবেথের দেহে অগ্নিরথ, বেঁচে থাকা হয় না সায়নের, এ যেন এক স্বপ্নের মৃত্যু লিউকোমিয়ায় মৃত্যুর পূর্বেই ।  

অদ্ভুত আনন্দরসে ভরা এই উপন্যাস "অগ্নিরথ"।